Ads Top

একই দিনে বুরুল আর বাওয়ালি

একই দিনে বুরুল আর বাওয়ালি
বুড়ুলে ভাগীরথীর ধারে 


অন্য রুট, উইকএন্ড , ২৮/০১/২০২২ : কলকাতা শহরের  কিছু জায়গা আছে, যা পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে চট করে ঘুরে আআ সম্ভব। কলকাতা থেকে দূরে তো অনেক গন্তব্য আছেই, কিন্তু অনেক সময় হাতে ছুটি পাওয়া যায় না সময়াভাবে থেকেই। তাই মানসিকভাবে নিজেকে একটু  চাঙ্গা করে তুলতে হলে কাছাকাছি গন্তব্যের ছোট্ট রুটগুলো জানা থাকলেও বেশ ভাল হয়। ঠিক এরকমই একটা গন্তব্যের কথা জানাতে চলেছি। 

আজকের গন্তব্য হল দক্ষিণ ২৪  বুরুল। এই জায়গাটা সকালে গিয়ে বিকেলবেলায় ফিরে আসার জন্যে বেশ ভাল হবে।  বন্ধুবান্ধবদের সাথে বা পরিবারের সাথে জমিয়ে পিকনিক করার জন্যেও আদর্শ বলা যেতে পারে। বেহালা চৌরাস্তা থেকে বুরুল জায়গাটা মাত্র ৩০ কিলোমিটার  দূরে। বুরুল হল ভাগীরথী নদীর একেবারে ধারে। বেহালা চৌরাস্তা থেকে ডায়মন্ড হারবার রোড  ধরে কিছুটা এগোলেই পড়বে  ঠাকুরপুকুর বাজার, সেই মোড়  থেকে ডান হাতে চলে গিয়েছে বাখরাহাট রোড।  ঐ  বাখরাহাট রোড  ধরে সোজা এগিয়ে যেতে হবে পশ্চিমদিকে। হাঁসপুকুর, সামালি, বাকরাহাট , মুচিশা পার করে এগিয়ে গেলেই পড়বে  বুরুল। 


                                                                          বুরুল-বাওয়ালি ভিডিও 

বুরুল জায়গাটা একেবারে ভাগীরথী নদীর ধারে। বিশালাকার ভাগীরথী নদী বয়ে চলেছে সামনে। নদীর ওপারে রয়েছে হাওড়ার '৫৮ গেট' জায়গাটি। বুরুলেই রয়েছে একটি জেটি ঘাট, লঞ্চ ছাড়ছে অনবরত। তাই ভাগীরথী বক্ষে লঞ্চে করে জলবিহার করতেও  মন্দ লাগবে না। এমনকি ওপারে গিয়ে ৫৮ গেট, ডিয়ার পার্ক জায়গাগুলোও ভাল লাগবে। তবে বুড়ুলে নদীর ধারে বসেও কেটে যাবে অনেকটা সময়।  নদীর ধারেই রয়েছে বেশ কিছু পিকনিক স্পট, যেখানে সবাই মিলে  জমিয়ে পিকনিকের আনন্দ উপভোগ করা যাবে। বুড়ুলে নদীবক্ষে সূর্যাস্ত অত্যন্ত মনোরম। 

বাওয়ালি রাজবাড়ী 

বুরুল থেকে ইচ্ছে করলেই চলে যাওয়া যাবে বিড়লাপুর। সেখানেও ভাগীরথী নদীর রূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যেতে পারে। বুরুল থেকেই নোদাখালীর কাছাকাছি চলে এসে বাওয়ালি মোড়  থেকে এগিয়ে গেলে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে রয়েছে রাজবাড়ী চত্বর। বাওয়ালি মোড় থেকে রাজবাড়ী রয়েছে প্রায় চার কিলোমিটার দূরত্বে। এখানে প্রায় ৩৬০ বছর আগে ছিলেন স্থানীয় রাজা। একটি বিরাট পুস্করিণীর সামনে রয়েছে রাজার বিশালাকার রাজবাড়ী। এখন অবশ্য সেটা পরিণত হয়েছে একটি ফাইভ ষ্টার হোটেলে। তাই অনুমতি না থাকলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।  এই বিশাল অট্টালিকায় নিয়মিত টিভি সিরিয়াল এবং সিনেমার শ্যুটিং হয়।  জায়গাটির বর্তমান নাম বাওয়ালি হলেও সম্ভবত আগে এই জায়গার নাম ছিল বোয়ালী। অর্থাৎ এখানে ছিল মূলত কাঠুরেদের বসবাস। 

রাজবাড়ীর পাশেই রয়েছে প্রাচীন এক মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। মন্দিরটি বিশালাকার হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভেঙে পড়ছে। ভিতরে রয়েছে লম্বা লম্বা থাম আর খিলান। তবে মন্দিরে নেই কোনো বিগ্রহ। একটা সময় এই মন্দিরের ছিল খুব জাঁকজমক। মন্দিরে বিগ্রহ ছিল রাধামাধবের বলেই শোনা যায়।  আটচালার এই মন্দিরের গায়ে ছিল খুব সুন্দর টেরাকোটার কারুকার্য। তবে এখন সে সব অতীত। 

বাওয়ালিতে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ 

শোনা যায়, এই মন্দির তৈরি করে দিয়েছিলেন মুঘল সম্রাট আকবর। অথবা হয়ত আকবরের আমলে তাঁর অর্থানুকূল্যে স্থানীয় রাজাই এই মন্দির তৈরি করিয়েছিলেন। কেউ কেউ বলেন মুঘল আমলে এখানকার রাজারাই তৈরি করেছিলেন এই মন্দিরগুলি। এই মন্দিরের পাশেও আরও কিছু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ছিল, যা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পুরোপুরি পরিত্যক্ত হয়ে বিলীন হয়েছে কালের গর্ভে। ঘন জঙ্গল সেই মন্দিরগুলিকে গ্রাস করেছিল। এখন অবশ্য সেইসব পরিষ্কার করে মূল মন্দিরটি সংস্কার করার কাজ হাত লাগানো হয়েছে। কেননা এখন বুরুল বা বাওয়ালি অঞ্চলে পর্যটকের ভীড় খুব একটা কম হচ্ছে না।  বিশেষ করে ছুটির দিনগুলিতে। 

বাওয়ালি ভ্রমণ সাঙ্গ করে ফেরার পথে দেখে নেওয়া যাবে বড় কাছারি মন্দির। ঠাকুরপুকুরের দিকে ফেরার সময় পথে পড়বে বাকড়াহাট। সেখান থেকেই পথ ঢুকে গিয়েছে সামান্য ভিতরে। এখানে রয়েছে জাগ্রত শিব মন্দির। বড় কাছারি বাবা নামে পূজিত হন মহাদেব। বহু দূর দূরান্ত থেকে ভক্তেরা বাঁকে করে পায়ে হেঁটে জল এনে বাবার মাথায় ঢালেন। অনেকেই তীর্থ করতে আসেন এই বড় কাছারি বাবার মন্দিরে। যদি হাতে সময় থাকে তাহলে ঠাকুরপুকুর বাজার থেকে ডানদিকে ডায়মন্ড হারবার রোড ধরে এগিয়ে গিয়ে পৈলানের কাছে স্বামী নারায়ণ মন্দিরটিও ঘুরে নেওয়া যায়।  নব নির্মিত অসামান্য শিল্পশৈলীতে নির্মিত এই মন্দিরটিও বেশ ভাল লাগবে। 

No comments:

Aaj Khabor. Powered by Blogger.