Ads Top

বেলপাহাড়িতে রহস্যে মোড়া আদিম মানুষের গুহা

বেলপাহাড়িতে রহস্যে মোড়া  আদিম মানুষের গুহা


অন্য রুট (বাংলা), 20/01/2022 :  রাজনৈতিক অশান্তির কারনে ঝাড়গ্রাম জেলার সবুজ প্রকৃতিকে দীর্ঘদিন ধরেই মুখ লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল। অথচ এই জেলার বেলপাহাড়ি ও কাঁকড়াঝোড় অঞ্চলকে নিয়ে গড়ে উঠতে পারত অসামান্য সার্কিট ট্যুরিজম। তবে এখন পর্যটনের ঝাঁপি থেকে এক এক করে বেরিয়ে আসছে এই প্রত্যন্ত অঞ্চল অর্থাৎ জঙ্গলমহলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পর্যটকদের আহ্বান জানিয়ে সেজে উঠছে জঙ্গলমহল।

কলকাতা থেকে উইকএন্ড সফরে যে কোনো সপ্তাহান্তে বেরিয়ে পড়া যায় ঝাড়গ্রাম ছাড়িয়ে বেলপাহাড়ির দিকে। কলকাতা থেকে কম বেশি 200 কিলোমিটার দুরত্ব হবে ঝাড়গ্রামের। পর্যটনের হাতছানি আছে সেখানেও। কিন্তু মুল হাতছানি রয়েছে জঙ্গলমহলেই। শহরের গন্ডি পার করে প্রকৃতির মাঝে সেখানে রয়েছে সবুজ অরণ্য, উঁচু-নিচু পাহাড়, টিলা, জলপ্রপাত, ড্যাম, এলিফ্যান্ট করিডোর, আদিবাসী সংস্কৃতি আর ছুটি কাটানোর অনাবিল আনন্দ। তবে সবচেয়ে আকর্ষণ রয়েছে যে রহস্যে তা হল আদিম মানুষদের গুহা।  


বেলপাহাড়ি-কাঁকড়াঝোড় অঞ্চলে হাজার হাজার বছর আগে ছিল আদিম মানুষদের বসবাস। এই মানুষরা থাকত পাহাড়ের গুহায়। এরা বন্য জন্তুদের সাথে লড়াই করতে পাথর দিয়ে তৈরি করত অস্ত্র। সেই সময় এই অঞ্চলে লৌহ আকর পাওয়া যেত। পাওয়া যেত তামাও। আদিম মানুষরা এই লোহার ব্যাবহার তখন সবেমাত্র শুরু করেছিল। তাদের অস্ত্র শস্ত্রে লোহার ব্যবহারও দেখা গিয়েছে। জঙ্গল মহল অঞ্চল থেকে আদিম মানুষদের যে সব অস্ত্র বা অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে সেগুলিতেও লোহার ব্যবহার দেখতে পাওয়া গিয়েছে। আদিম মানুষরা ছবিও আঁকতে পারত। বেশ কয়েকটি গুহায় তাদের আঁকা গুহাচিত্র দেখতে পাওয়া গিয়েছে, যেখানে তারা উজ্জ্বল প্রাকৃতিক রং ব্যবহারও করতে পারত বলে জানা গিয়েছে। 

বেলপাহাড়ি ও কাঁকড়াঝোড় এলাকায় উঁচু নিচু বেশ কিছু টিলা বা পাহাড় আছে। এই টিলাগুলিতে ঘন্টাখানেকের পরিশ্রমে উপরে ওঠা যায়। ওপর থেকে চারপাশের দৃশ্যও মোহিত করে যে কোনো পর্যটককে। বেশ কয়েকটি টিলার মাথায় আদিম মানুষের গুহা দেখতে পাওয়া যায়, যেগুলি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। 


বেলপাহাড়ি থেকে প্রায় 20 কিলোমিটার দুরে রয়েছে কাঁকড়াঝোড় এলাকার লালজল বলে একটা জায়গা। মূলত লালজল একটি অনুচ্চ পাহাড় আর তার পাদদেশে ছোট্ট একটা গ্রাম। গ্রামের নামও লালজল গ্রাম। এই লালজল পাহাড়ের মাথায় রয়েছে বেশ কিছু গুহা যেখানে থাকত আদিম মানুষরা। পাহাড়ের মাথায় চড়ে গুহাগুলি দেখে নেওয়া যায়। তবে বড় বড় পাথরের ফাঁক দিয়ে শরীর বেঁকিয়ে ওপরে উঠতে হবে, বয়স্কদের ওপরে না ওঠাই ভাল। পাহাড়ের মাথার দিকে বেশ কয়েকটা গুহা আছে যেখানে আদিম মানুষদের বসবাস ছিল। 

এই পাহাড়ে কিছুকাল আগেও এক সাধুবাবা থাকতেন। তাঁর নাম ছিল রামস্বরূপ শর্মা। এই এলাকায় এসে তিনি প্রথমে ঐ  লালজল গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীদের অনুরোধ করেছিলেন তাঁকে পাহাড়ের মাথায় পৌঁছে দিতে। সেই সময় এই অঞ্চল ছিল ঘন অরন্যাবৃত। এখানে ছিল প্রচুর চিতা এবং ভাল্লুকের বাস। তাই পাহাড়ের মাথায় সাধুবাবাকে গ্রামবাসীরা পৌঁছে দিতে চায় নি। যাই হোক, সাধুবাবার বারংবার অনুরোধেই তাঁকে পাহাড়ের মাথায় পৌঁছে দেওয়া হয়। সাধুবাবা পাহাড়ের মাথায় আদিম মানুষদের গুহায় থেকেই সাধনা করতে থাকেন। 


গ্রামবাসীরা সাধুবাবার সাথে মাঝেমাঝে দেখা করতে গিয়ে দেখতে পেতেন সেই সাধু বিশাল অজগর সাপ্কে বালিশ করে শুয়ে আছেন। তাঁকে তাঁর পাশে বসেই পাহাড়া দিচ্ছে একটি চিতা বাঘ। এভাবে 12 বছর কেটে যায়। সাধুবাবা ঐ এলাকায় অন্নপূর্ণা পূজা শুরু করেন। যে পূজা প্রতিবছর এখনও চলছে। পাহাড়ের কোলে মায়ের একটি মন্দিরও নির্মান করা হয়েছে। পূজো শুরু হওয়ার বছর আটেক পর ডেহ রাখেন সাধুবাবা। তাঁকে ঐ গ্রামেই সমাহিত করা হয়। এই সবকিছু দেখে নেওয়া যাবে এক এক করে।


আদিম মানুষের গুহা এবং সাধুবাবা সম্পর্কে অনেক কিছুই শুনতে পাওয়া যাবে লালজল গ্রামের বয়স্ক মানুষদের থেকে। তাঁরা বলেন পাহাড়ের মাথায় আদিম মানুষদের যে গুহা ছিল তা পাহাড়ের ভিতরে ভিতরে নাকি 2 বা 3 কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ঐ গুহায় নাকি এখনও রয়েছে সোনার তৈরি দেবী মূর্তি। যার নিত্য পূজা করতেন ঐ সাধুবাবা। কিন্তু পরে গুহাগুলির আভ্যন্তর সম্পূর্ণভাবে ধ্বসে যায় এবং ঐ স্বর্ন মূর্তিও নাকি তাতে চাপা পড়ে যায়। 

কাঁকড়াঝোড় এবং বেলপাহাড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সপ্তাহান্তের ছুটির দিনগুলোকে সত্যিই উপভোগ্য করে তোলে। হাতে সময় থাকলে কাঁকড়াঝোড় পার হয়ে ঘাটশিলা পর্যন্ত অনায়াসে ঘুরে নেওয়া যায়। রাত্রিবাসের জন্য বেলপাহাড়িতে থাকাটাই উচিত হবে। রয়েছে কয়েকটা হোম স্টে। তবে ঝাড়গ্রামের কোনো হোটেলে থেকেও গাড়ি ভাড়া করে জঙ্গলমহলে ঘুরে বেড়ানো যায়। 


বেলপাহাড়ি - অতিথি নিবাস -  ৯৪৭৪৪০৫৪৬৪,  বেলপাহাড়ি গেস্ট হাউস - ৮৯৭২৯৯৯৯২৬, লাল পিঁপড়ে ফ্যামিলি গেস্ট হাউস - ৭৫০১৬৪৪৭৮৮, বিজলি ভবন - ৯৬৭৯৬৩২৪৩১, বাগান বাড়ি - ৮৯৭২৯১৮৫৮৯

কাঁকড়াঝোড়  - মাহাতো হোম সাথে - ৮৭০৯৮৩৪৩৮৫, কাঁকড়াঝোড়  হোম  স্টে  - ৮১০১৪৫০০৭২, শালবাড়ি রিসর্ট - ৯৮০৪২৮৫৮১৫, চারমূর্তি হোম স্টে  - ৯৮৩৬৮৩০৩৪২, কাঁকড়াঝোড় গেস্ট হাউস - ৯০০২০৬১৭৮৪

ঝাড়গ্রামেও অনেক হোটেল আছে : আরণ্যক রিসর্ট - 9734346666, মার্তিক গার্ডেন - 9433494400

বেলপাহাড়িতে রেস্টুরেন্ট - কাঁচালঙ্কা ফ্যামিলি রেস্টুরেন্ট - ৮৯০০২৬৩৬৯০ / ৮৯১৮১০০০৯২, খেয়াতরী হিন্দু হোটেল - ৯৯৩২৩৪৬২০৭।  কাঁকড়াঝোড়ের  রেস্টুরেন্ট - বাবা ভৈরব রেস্টুরেন্ট - ৮১০১৪৫০০৭২ (এই রেস্টুরেন্টে ফোন করে সকালবেলায় বলে রাখুন কতজন খাবেন, তাহলে ঠিক সময় খাবার পেতে সুবিধা হবে)

কৃতজ্ঞতা : বিধান দেবনাথ 

No comments:

Aaj Khabor. Powered by Blogger.