Ads Top

কুলু : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার

কুলু : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার


অন্য রুট, 09/10/2021 : আমরা যারা হিমাচল প্রদেশে বেড়াতে যাই, সিমলা ভ্রমণ সাঙ্গ করে সেখান থেকে মান্ডি হয়ে কুলুর ওপর দিয়ে সরাসরি চলে যাই মানালিতে। উপেক্ষিত থেকে যায় কুলু। অথচ প্রকৃতি প্রেমিক মানুষের অন্তত একবার আসা উচিত কুলু শহরে। পর্যটকেদের উচিত কুলুতে রাত্রিবাস করে কুলু, মনিকরন এবং নগ্গার দেখে তারপর মানালিতে চলে যাওয়া। 


বিযাস নদীর ধারে 4196 ফুট উচ্চতায় রয়েছে কুলু শহরটি। এই উপত্যাকার নামটিও কুলু উপত্যাকা এবং জেলার নামও কুলু জেলা। শহরের পাশ দিয়ে অসংখ্য বোল্ডারে ধাক্কা খেতে খেতে সগর্জনে এগিয়ে গিয়েছে বিয়াস নদী। কুলু খুব সুন্দর অথচ ব্যস্ত শহর। কেননা জেলা সদর হওয়ায় কুলুর গুরুত্ব অনেক বেশি। তাছাড়া কুলু হল হিমাচল প্রদেশের অন্যতম ব্যবসায়ীক প্রাণকেন্দ্র। সুতরাং শপিং ব্যাপারটাও দারুন জমবে এই কুলু শহরে। 

কুলুর হাইওয়ে

এবার দেখে নেওয়া যাক কি কি দর্শনীয় রয়েছে কুলু শহরকে কেন্দ্র করে। কুলু উপত্যাকাতেই রয়েছে দেশের নবীনতম অভয়ারণ্য দ্য গ্রেট হিমালয়ান ন্যাশানাল পার্ক। কুলু ও স্পিতি উপত্যাকার মধ্যে প্রায় 700 কিলোমিটার জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এই অভ্যযারন্য। প্রচুর পশু-পাখির বাস এখানে। সম্প্রতি হেরিটেজ সাইট তকমা পেয়েছে।


দেখে নেওয়া যায় রঘুনাথ্জীর মন্দির। ষোড়শ শতাব্দীতে রাজা জগৎ সিং নিজের একটি ভুলের প্রায়শ্চিত্য করার জন্যে অযোধ্যায় একটি রঘুনাথ জী বা শ্রী রাম্চন্দ্রে একটি মূর্তি পাওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। অযোধ্যা থেকে প্রাপ্ত সেই মূর্তিটি রয়েছে এখানকার রঘুনাথজীর মন্দিরে। প্রতি বছর দশেরার দিন বড়সড় উৎসবের আয়োজন করা হয় এখানে।


কুলু থেকে 60 কিলোমিটার দুরে বাঞ্জারে রয়েছে শৃঙ্গী ঋষির মন্দির। বলা হয় শ্রীরাম চন্দ্র অযোধ্যা থেকে এসেছিলেন এই বাঞ্জার উপত্যাকায়। তার আগে এখানে শাসনকার্য চালাতেন শৃঙ্গী ঋষি। কুলু উপত্যাকার 18 জন উপাস্য দেবতার মধ্যে শৃঙ্গী ঋষি অন্যতম। কুলু মানালি রোডের ওপরেই রয়েছে বৈষ্ণোদেবী মন্দির, এই মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন স্বামী সেবক রামজী। এছাড়াও কুলুর সুলতানপুরে রয়েছে নরসিংহজীর মন্দির।

বিযাস নদী

কুলু থেকে প্রায় 10 কিলোমিটার ওপরে 2435 মিটার উচ্চতায় রয়েছে এই অঞ্চলের বিখ্যাত বিজলি মহাদেব মন্দির। এখানে রয়েছে একটি শিব মন্দির। প্রতি বারো বছরে একবার এই মন্দিরের মাথায় বজ্রপাত হয়। সেই বজ্রপাতে শিবলিঙ্গটি টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এরপর মন্দিরের পুরোহিত গ্রামে গ্রামে গিয়ে মাখন ও চিনি ভিক্ষা করেন। সেই মাখন ও চিনি দিয়ে তিনি শিব লিঙতিকে আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনেন। এই প্রথা চলছে বহু বহু বছর ধরে। এই বছরেই ঐ মন্দিরে বজ্রপাত হয়েছে। শিব মন্দিরের চত্বর থেকে গোটা কুলু উপত্যাকা দেখা যায়। দেখা যায় প্রবাহিত বিযাস নদীকে। দুরে দেখতে পাওয়া যায় হিমালয়ের রজত্শুভ্র পর্বত শৃঙ্গগুলিকে। বিজলি মহাদেব মন্দিরে যেতে হলে অন্তত আড়াই কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে যেতে হয়। তবে চারপাশের অসামান্য প্রাকৃতিক দৃশ্য পথ শ্রম ভুলিয়ে দেবে। 

কুলু উপত্যাকা

কুলু উপত্যাকায় 2692 মিটার উচ্চতায় আরও জায়গা রয়েছে যেখান থেকে প্রায় 360 ডিগ্রি দিকচক্রবালে দেখা মিলবে অসংখ্য বরফের মুকুট পরিহিত শৃঙ্গের। ঐ জায়গার নাম হল 'সোজা'। সেখান থেকে মাত্র 5 কিলোমিটার দূরেই রয়েছে এই অঞ্চলের বিখ্যাত ট্রেক রুট জালোরি পাস। সামান্য দুরত্বে রয়েছে সারেওলসর লেক। অবশ্য এই পথে সবটাই ট্রেকিং রুট। সবুজ অরণ্য ও বুগিয়ালের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে হবে।


এছাড়াও বাজুয়ারায় গিয়ে পাথরে নির্মিত পান্ডবদের তৈরি বসেশ্বর মহাদেব মন্দিরটিও অবশ্যই দেখে নিন। দুরন্ত পার্বতী নদীর ধারে স্বর্গীয় সৌন্দর্যের মাঝে রয়েছে কাসোল জায়গাটি। অবশ্যই দেখে নিন। রাত্রিবাসের জন্যে এখানে লগ হাট রয়েছে।

নাগ্গর ফোর্ট

প্রায় 1400 বছর আগে কুলু সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল নাগ্গর। এখানে গেলে দেখবেন পাথর এবং কাঠের কাজের সংমিশ্রণে প্রাচীন দুর্গ ((এখন কিছুটা অংশ হোটেল))।  রুশ চিত্রকর নিকোলাস রয়েরিচের আঁকা দুর্দান্ত কিছু পেইন্টিং, কয়েকটি প্যাগোডা ধর্মী মন্দির আর হিমালয়ের অসামান্য নৈসর্গিক দৃশ্য। 


কুলু শহর থেকে 10 কিলোমিটার দুরে ঘন অরণ্যের মধ্যে পাহাড়ের মাথায় ব্রিটিশদের তৈরি একটি প্যালেসের মত দেখতে বাংলো আছে। এই জায়গাটিকে বলা হয় কাইস ধার। ট্রেক করেও যাওয়া যায়। এখানে ঘন অরণ্যকে পেয়ে কোলাহল ও দূষণ মুক্ত পরিবেশ যেন সেজেগুজে অপেক্ষা করে থাকে পর্যটকের জন্যে। বাংলোতে রাত্রিবাসও করা যায়। দারুন অভিজ্ঞতা পাসোয়া যাবে।

দেখে নিন কুলু বাস স্ট্যান্ড থেকে 26 কিলোমিটার দুরে অবস্থিত পুরোন কুলু গ্রাম। হিমাচলি গ্রাম্য জীবনের স্বাদ পাবেন। ঐ পথেই দেখে নেবেন ভেখ্লি মাতা মন্দির। এই পথেও সঙ্গী হবে নৈসর্গিক সৌন্দর্য। 

মালানা গ্রাম

কুলু বেড়াতে এসে অবশ্যই যাবেন মালানা গ্রাম দেখতে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আগাগোড়া মোড়া ছবির মত সুন্দর এই গ্রামটিকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন গণতান্ত্রিক গ্রাম বলা হয়। গ্রামবাসীরা ঋষি জামলুর উপাসক। এই গ্রামের নিজস্ব আইন এবং বিচার ব্যাবস্থা আছে। গ্রামবাসীরা নিজেদের ভারতীয় বলে মনে করে না। এরা চলে নিজেদের নিয়মেই।


কুলু উপত্যাকায় দুটি দিন থেকে আশেপাশের সবকিছু দেখে নিয়ে মানালির দিকে রওনা হোন।

কুলুর হোটেল - হোটেল কুলু ভ্যালি - 9218602223, হোটেল সরলা রিজেন্সি, 8894813000, হোটেল সিদ্ধার্থ - 9218550501, রিভার সাইট গেস্ট হাউস - 9817172200, হোটেল নমন - 01246201618;


No comments:

Aaj Khabor. Powered by Blogger.