Ads Top

পশ্চিম সিকিমে রিঞ্চেনপং

পশ্চিম সিকিমে রিঞ্চেনপং


অন্য রুট, 01/10/2021 : যদি এবার মনস্থ করেই ফেলেন যে সিকিমের কোথাও বেড়াতে যাবেন। অথচ মানুষের ভীড়ে হারিয়ে যেতেও ইচ্ছে করছে না, তাহলে এবার আপনার গন্তব্য হওয়া উচিত পশ্চিম সিকিমের সেই সব জায়গাগুলোতে যেখানে ভীড়ভাট্টা হবে কম। আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য হবে অপরূপ। 

পশ্চিম সিকিমে রয়েছে এরকম বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র, যেখানে একবার গেলে মনে হবে বার বার যাই। পশ্চিম সিকিমে বেড়াতে গিয়ে এরকমই চলে যাওয়া যেতে পারে কালুক, ভার্সে, রিঞ্চেনপং, উত্তরে, রাবাংলা, লেগশিপ, পেলিং, ইয়াকসাম এই সব জায়গাগুলোতে। 


পশ্চিম সিকিমের পাহাড়ে বিস্তীর্ন এলাকায় রয়েছে গুরাস বা রডোড্রেনড্রন গাছের অরণ্য। সিকিমের এই দিকটায় পাহাড়ের উচ্চতাও যথেষ্ট। যার ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মন ভরিয়ে দেয়। কাঞ্চনজঙ্ঘা হাতছানি দিয়ে ডাকে।

পশ্চিম সিকিমে বেড়াতে গেলে সবচেয়ে ভাল হয় যদি রিঞ্চেনপং জায়গাটিতে থেকে বাকি জায়গাগুলো সাইট সিয়িং করে দেখে নেওয়া যায়। রিঞ্চেনপং-এর উচ্চতা প্রায় 5,576 ফুট। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে বাস বা শেয়ার জিপে প্রথমে পৌঁছাতে হবে জোরথাং বা নয়াবাজারে। সেখান থেকে শেয়ার জিপ পাওয়া যাবে রিঞ্চেনপং যাওয়ার। এছাড়াও শিলিগুড়ি বা এনজেপি থেকে গাড়ি ভাড়া করে চলে যাওয়া যায় রিঞ্চেনপং। গ্যাংটক থেকেও গাড়ি ভাড়া করে বা বাসে পৌঁছানো সম্ভব এই পাহাড়ি ছোট্ট জনপদে।


এবার দেখে নেওয়া যাক রিঞ্চেনপংকে কেন্দ্র করে কি কি দ্রষ্টব্য রয়েছে। 

রিঞ্চেনপং এ রয়েছে দুটি মনাষ্ট্রী।  প্রথমটি হল গুরুং মনাষ্ট্রী, যাকে রিসাম মনাষ্ট্রীও বলে।  পাহাড়ের 6,250 ফুট উচ্চতায় এর অবস্থান। পাহাড়ের একটা গিরিশিরার ওপরে থাকা এই রিসাম মনাষ্ট্রী থেকে চতুর্দিকের যে দৃশ্যপট ভেসে ওঠে, তা বোধ হয় দীর্ঘদিন মনে থেকে যাবে। মন ভরে যাবে অদ্ভুত এক ভাল লাগায়। মনাষ্ট্রীর পিছন দিকে রয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিতে গড়ে ওঠা একটি রিক্রিয়েশন সেন্টার। মনাষ্ট্রী জায়গাটি ছবি তোলার জন্যে সত্যিই আদর্শ।


অপর মনাষ্ট্রীটির অবস্থান রিঞ্চেনপং শহর থেকে একটু উঁচুতে। পাহাড়ি বনপথে হাল্কা ট্রেক বা পায়ে হেঁটেই পৌঁছানো যাবে এই প্রাচীন মনাষ্ট্রীতে। রয়েছে অপরূপ একটি বুদ্ধ মূর্তি। যাকে অতি বুদ্ধ নামেও ডাকা হয়।


রিঞ্চেনপং জায়গাটি ইতিহাসেরও সাক্ষী হয়ে রয়েছে। এক সময় বৃটিশ সেনাবাহিনী আক্রমণ করেছিল রিঞ্চেনপং জায়গাটিকে। এখানেই ছাউনি ফেলেছিল বৃটিশ সেনারা। এখানেই ছিল একটি বড় পুকুর। পুকুরের ধারেই সেনা ছাউনি ফেলা হয়েছিল। বৃটিশ সেনাদের পর্যুদস্ত করতে স্থানীয় যোদ্ধারা ঐ পুকুরের জলে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল। ঐ পুকুরের জল পান করে অর্দ্ধেক বৃটিশ সেনা প্রাণ হারায়। এরপর রণে ভঙ্গ দিয়ে ইংরেজরা ঐ জায়গা ত্যাগ করে ফিরে যায়। ঐ বিষ পুকুর এখনও আছে। অনেকে বলেন ঐ পুকুরের জল নাকি এখনও বিষাক্ত, তাই ঐ পুকুরের জল কেউ পান করে না। পুকুরের পাশে একটি পুরোন আমলের বৃটিশ বাংলো রয়েছে।


রিঞ্চেনপং থেকে প্রায় 19 কিলোমিটার দুরে অপূর্ব সৌন্দর্যের মাঝে রয়েছে ছায়াতাল। বেশ রোমান্টিক এই জায়গাটি, এখান থেকে দুরে আকাশের গায়ে জল ছবির মত ভেসে থাকা রজত শুভ্র পর্বত শৃঙ্গগুলি দেখতে দেখতেই সময় কেটে যাবে। কাছেই রয়েছে সিরিজুঙ্গার মন্দির। সিরিজুঙ্গা ছিলেন পুরোন দিনের এক গবেষক, তাঁর স্মৃতিতে গড়ে উঠেছে তেওংসি সিরিজুঙ্গা লিম্বু কালচারাল হেরিটেজ ও রিসার্চ সেন্টার। তাঁর পুরো নাম ছিল তেওংসি সিরিজুঙ্গা সিন থেবে। এখানে সিরিজুঙ্গার একটি 36 ফুট উঁচু ব্রোঞ্জের মূর্তি রয়েছে।

কালুক গ্রামটি বেশ সুন্দর। এখন অবশ্য ব্যস্ততা বেশ কিছুটা বেড়েছে এই জনপদে। দোকান পাট, হোমস্টে'র সংখ্যাও বেড়েছে। এই গ্রাম ছেড়ে আরও পশ্চিম দিকে গেলে দার্জিলিং জেলার সান্দাকফুর দিকে চলে যাওয়া যাবে। কালুক জায়গাটি সত্যিই আকর্ষণীয়। বার বার মনে হবে শহুরে জীবন ছেড়ে যদি কয়েকটা দিন এখানে কাটিয়ে দেওয়া যেত, বুক ভরে অক্সিজেন নেওয়া যেত, তাহলে হয়ত আয়ুও বেড়ে যেত খানিকটা।


কালুকের কাছেই রয়েছে ভার্সে জায়গাটি। এই জায়গাটি আসলে রডোডেনড্রন স্যাংচুযারির অন্তর্গত। এখান থেকে হিলে পর্যন্ত গাড়িতে গিয়ে 4 কিলোমিটার ট্রেক করে ভার্সেতে পৌঁছানো যায়। পথে সঙ্গী হবে অপার্থিব কিছু দৃশ্যাবলী। ভার্সেতে একটি বাংলো আছে যার নাম গুরাসকুঞ্জ। এপ্রিল মে মাসে এই এলাকা থোকা থোকা লাল গুরাস বা রডোডেনড্রন ফুলে ভর্তি হয়ে থাকে। গুরাসকুঞ্জে থাকার অভিজ্ঞতাও অনন্য।

কালুক থেকেই 10 কিলোমিটার দুরে রয়েছে হি গ্রামের ওয়াটার গার্ডেন। সাইট সিয়িং হিসেবে অবশ্য দ্রষ্টব্য। রয়েছে দুটি সুইমিং পুলও।

কালুক থেকে 24 কিলোমিটার এবং রিঞ্চেনপং থেকে 27 কিলোমিটার দুরে রয়েছে সিনসোর ব্রীজ, এটি এশিয়ার দ্বিতীয় উচ্চতম সেতু।


রিঞ্চেনপং থেকে স্বল্প দুরত্বে রয়েছে উত্তরে গ্রামটি। এর অবস্থান নেপাল সীমান্তে। এখানেই মাত্র 5 কিলোমিটার দুরে রয়েছে তেনজিং-হিলারি স্টপ। রয়েছে তেনজিং নোরগে ও এডমন্ড হিলারির মত দুই প্রবাদ প্রতীম পর্বতারোহীর মূর্তি। উত্তরে গ্রামটির পরিবেশ সত্যিই মুগ্ধ করে তোলে। 


রিঞ্চেনপং থেকে পেলিংএর দিকে যেতে হলে লেগশিপ নামে একটি জায়গা পড়বে। এই লেগশিপ থেকেই ডান দিকের রাস্তা রাবাংলা হয়ে সিংতামে গিয়ে পড়েছে। সেখান থেকে বাম হাতের রাস্তাটি গিয়েছে গ্যাংটকে এবং ডান দিকের রাস্তাটি গিয়েছে রংপো, তিস্তাবাজার হয়ে শিলিগুড়ির দিকে। লেগশিপ থেকে সোজা রাস্তাটি গেজিং হয়ে পেলিং অতিক্রম করে শেষ হয়েছে ইয়াকসাম গ্রামে। লেগশিপ জায়গাটিতে রয়েছে বিশাল এক শিব মন্দির। যে শিবের উল্লেখ রয়েছে পুরাণেও। লেগশিপের কাছেই রয়েছে তাতোপানি। এটি একটি উষ্ণ প্রস্রবন। রিঞ্চেনপং থেকে দুরত্ব 20 কিলোমিটার। 


রিঞ্চেনপং-এর হোটেল - হোটেল হিল ভিউ - 9874892592, হোটেল ল্যান্ড স্কেপ - 9800398309, দ্য এস পাইন ভ্যালি - 08172032923, গ্রীন লিফ রিসর্ট - 9734650066, হোটেল ফামরং রিট্রিট - 9432324780;



No comments:

Aaj Khabor. Powered by Blogger.