মানস অভয়ারণ্য ভ্রমণ
অন্য রুট, 22/09/2021 : বাতাসে হিমেল পরশ লাগলেই অরণ্য ভ্রমণ অনেকটাই উপভোগ্য হয়ে ওঠে। সবুজ বনের সজীবতা যেন আরও বেড়ে যায়, মনে হয় গভীর বন তার রহস্যময় পরিবেশ নিয়ে পর্যটনের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। অরণ্য নীরব, কোলাহল বিহীন, বড় বেশি চুপচাপ। তবে রহস্যময় সৌন্দর্যে সে নীরব থেকেও সরব, অন্তত প্রকৃতি প্রেমিক মানুষের কাছে।
আজ আমরা ঘুরতে এসেছি আসামের মানস অভয়ারণ্যে। 2837 বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিশাল অরণ্য এই মানস, 1985 সালে পেয়েছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা। অসংখ্য প্রজাতির গাছ গাছালি যেমন আছে, তেমন এই অরণ্য সমৃদ্ধ বিভিন্ন পশুর বাসভূমি হিসেবে। এখানে এক শৃঙ্গ গন্ডার, হাতি, বুনো মোষ, গৌর, শ্যাম্প্ড ডিয়ার, ক্যাপড লেঙ্গুর, এমনকি ক্লাউডেড লেপার্ডও রয়েছে। ভাগ্য ভাল থাকলে বাঘ এবং গোল্ডেন লেঙ্গুরও দেখতে পাওয়া যায় এই অরণ্যে। এখানে রয়েছে অসংখ্য প্রজাতির পাখি।
মানস অরণ্যের কাছাকাছি কোনো বিমানবন্দর নেই। তাই এখানে যেতে হলে গৌহাটির বিমানবন্দরে গিয়েই নামতে হবে। গৌহাটি শহর থেকে মানস অভয়ারণ্যের দুরত্ব প্রায় 177 কিলোমিটার। গাড়িতে লাগে ঘন্টা পাঁচেক। মানসের সবচেয়ে কাছের রেল স্টেশন বড়াপেটা (22 কিলোমিটার) হলেও গৌহাটি শহর থেকে গাড়ি ভাড়া করে আসাই উচিত হবে।
মানস অভয়ারণ্য সমুদ্রতল থেকে 85 মিটার উঁচুতে অবস্থান করছে। বিশাল এই বনভূমির মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে মানস নদী যা ভুটানের রয়াল মানস বনভুমিকে ভারতের মানস বনভূমির থেকে পৃথক করেছে। মানস নদী ব্রম্ভপুত্র নদের শাখা নদী। অবশ্য এই বনভূমিতে আরও কয়েকটা নদী বয়ে গিয়েছে।
প্রবেশ পথ : মানস অভয়ারণ্যে প্রবেশ করতে হলে বড়াপেটা রোডে ফিল্ড ডিরেক্টর অফিস থেকে পারমিট সংগ্রহ করতে হবে। এখান থেকেই অরণ্যে প্রবেশ করার জন্যে গাড়ি ভাড়া করা যায়। বন দপ্তর কোনো গাড়ি বা গাইড দেয় না।
প্রবেশ মূল্য : ভারতীয়দের জন্যে 50 টাকা (অর্ধেক দিন), ও 200 টাকা (সারাদিন)। বিদেশিদের জন্যে 500 টাকা (অর্ধেক দিন) ও 2000 টাকা (সারাদিন)। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত জিপগুলিকে যাত্রী নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। এক একটি জিপে 4 জন করে যাত্রী নেওয়া যায়। অর্ধেক দিনের জপ ভাড়া নেয় 3000 টাকা, পুরো দিনের জন্যে 5000 টাকা। স্টিল ক্যামেরা চার্জ 50 টাকা, ভিডিও ক্যামেরার চার্জ 500 টাকা দিতে হয় (বিদেশিদের স্টিল ক্যামেরা 500 টাকা ও ভিডিও ক্যামেরা 1000 টাকা দিতে হয়)।
মানস অভয়ারণ্যে বেড়াতে আসার সেরা সময় হল নভেম্বর মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। এই সময়ে এই অভয়ারণ্যের প্রকৃতি যেন আরও সজীব হয়ে ওঠে। যদিও অকটোবর ও মে মাসেও অর্ধেক মাস করে এই অরণ্যে খোলা থাকে। তবে বর্ষাকালে সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয় এই অভয়ারণ্য। সপ্তাহের প্রতিদিনই খোলা থাকে পর্যটকদের জন্য ।
মানস অভয়ারণ্যে জিপ সাফারি, এলিফ্যান্ট সাফারি করা যায়। এছাড়াও রিভার রাফ্টিং করা যেতে পারে। অথবা অরণ্যের কাছাকাছি থাকা গ্রাম বা চা বাগান পরিদর্শনে যাওয়া যেতে পারে। খুব ভাল লাগবে।
মানস অভয়ারণ্যে জিপ সাফারি এক দুর্লভ অভিজ্ঞতা হয়ে উঠতে পারে। এই অরণ্যে অন্তত 20টি প্রজাতির বিপন্ন শ্রেণীর পাখি আছে। রয়েছে বিরল প্রজাতির আসাম রুফ্ড টার্টল, পিগমি হগ, হিস্পিড খরগোশ। অন্যান্য পশু তো আছেই। জিপ সাফারি হয় দুটো সময়ে, সকাল 9টা থেকে 12টা এবং দুপুর 2টো থেকে বিকেল 5টা পর্যন্ত। সাফারির জিপ ভাড়া নেয় 3600 টাকা।
এলিফ্যান্ট সাফারি আরও আকর্ষণীয়, কারন হাতির পিঠে চেপে অরণ্যের সেইসব জায়গায় পৌঁছানো যায় যেখানে সাফারির জিপ পৌঁছাতে পারে না। এলিফ্যান্ট সাফারির ভাড়া 500 টাকা ভারতীয়দের জন্যে, 1550 টাকা বিদেশিদের জন্যে। সকাল 6টা ও 7টা এই দুই শিফটে এলিফ্যান্ট সাফারি করা হয়।
এখানে মানস নদীর স্বচ্ছ সবুক জলে বন্য পরিবেশে প্রায় 35 কিলোমিটার রিভার রাফ্টিং এর ব্যাবস্থা রয়েছে রোমাঞ্চ প্রিয় পর্যটকদের জন্যে।
মানস অভয়ারণ্য বোড়ো উপজাতিদের বাসভূমি। রয়েছে অন্যান্য উপজাতিরাও। অভয়ারণ্যের আশেপাশে রয়েছে তাঁদের গ্রাম, ইচ্ছা হলে সেই সব গ্রামে বেড়াতে যাওয়া জায় এবং তাদের লোকগান ও নাচ দেখতে পাওয়া যায়। কাছাকাছি রয়েছে ফতেমাবাদ চা বাগান। সেখানেও ঘুরে বেড়ানো যায়। আগেই বলেছি মানস অভয়ারণ্যে রয়েছে প্রচুর পাখি। অরণ্যের মধ্যে প্রায় সর্বক্ষণ পাখির কূজন সঙ্গী হিসেবে পাওয়া যাবে। তাই স্রেফ বার্ড ওয়াচ করতে হলেও বায়নাকুলার আর ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেই হল।
রাত্রিবাসের জন্যে এখানে হোটেল কম থাকলেও কটেজ রয়েছে বেশ কিছু। যেমন শিখিরি কটেজ (8287876070), মুসা জাঙ্গল রিট্রিট (7896471992), ফ্লরিকান কটেজ (6001090419), বিরিনা কটেজ, বাঁশবাড়ি কটেজ (03612667871) ইত্যাদি।
No comments:
Post a Comment