Ads Top

মহারানা মানসিংহের মৃগয়াভূমি রণথম্ভোর

মহারানা মানসিংহের মৃগয়াভূমি রণথম্ভোর
রণথম্ভোর ফোর্ট 

অন্যরুট, রণথম্ভোর, রাজস্থান, ০৯/০৩/২০২১ :  রাজস্থানে রণথম্ভোর বেড়াতে গেলে অনেকেই সময় নষ্ট না করে শুধুমাত্র রানাথম্ভোর ন্যাশনাল পার্ক দেখেই চলে যান। কেননা পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাঁরা রাজস্থান বেড়াতে যান, তাঁদের হাতে যে পরিমিত সময় হাতে থাকে, তাতে রণথম্ভোরের বাকি জায়গাগুলো আর দেখা সম্ভব হয় না। তাই উচিত হবে রণথম্ভোরে  গিয়ে অন্ততপক্ষে দুটো রাত্রি কাটিয়ে ভালভাবে সবকিছু দেখে নেওয়া। রণথম্ভোরে ন্যাশনাল পার্ক ছাড়াও আরও অনেক কিছুই আছে যা একজন পর্যটককে আকর্ষণ করতে পারে। 

ফোর্ট থেকে অরণ্য দর্শন 

রণথম্ভোর ন্যাশনাল পার্ক সোয়াই মাধোপুর  শহর থেকে মাত্র সাড়ে ১৩ কিলোমিটার দূরে রয়েছে।  এই সোয়াই মাধোপুর জায়গাটি ছিল সোয়াই মান সিংহের মৃগয়াভূমির অন্তর্গত। আর ওই রণথম্ভোর অরণ্যটি ছিল জয়পুরের রানা মানসিংহের  মৃগয়াক্ষেত্র। ওই অরণ্যে শুধুমাত্র রাজ্ পরিবারই যেতেন মৃগয়া করতে। সমগ্র অরণ্যের ব্যাপ্তি ৪০০ বর্গ কিলোমিটার, আর তার সাথে মান সিংহ স্যাংচুয়ারি জুড়ে নিলে মোট আয়তন ৫০০ বর্গ কিলোমিটার। রণথম্ভোর অরণ্যে রয়েছে প্রচুর পশু, পাখী এবং সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী। এই অরণ্যকে ন্যাশনাল পার্কের তকমা দেওয়া হয়েছে, তাই এই সুরক্ষিত অভয়ারণ্যে এখন আর পশুদের রাজা-বাদশার বন্দুকের নলের সামনে অসহায়ভাবে প্রাণ দিতে হয় না। 


১৯৫৫ সালে এই বিশাল বনাঞ্চল ভারত সরকার সোয়াই মাধোপুর ক্রীড়া স্যাংচুয়ারি হিসেবে গড়ে তুলেছিল। ১৯৭৩ সালে এই বনাঞ্চলকে ভারত সরকার টাইগার রিজার্ভ ফরেস্ট হিসেবে ঘোষনা করে এবং শেষমেশ ১৯৮০ সালে এই বিশাল অরণ্যকে ন্যাশনাল পার্ক-এর শিরোপা দেওয়া হয়েছিল। সংলগ্ন আরও দুটি আরণ্যকে নাম দেওয়া হয়েছিল সোয়াই মাধোপুর স্যাংচুয়ারি এবং কেলাদেবী স্যাংচুয়ারি। আরাবল্লী ও বিন্ধ্য পর্বতের সংযোগস্থলে এই রণথম্ভোর অরণ্যের অবস্থান হওয়ায় এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বেশ উপভোগ্য। এই অরণ্যে রয়েছে রয়্যাল  বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, নীলগাই, বুনো শূকর, ডোরাকাটা হায়না, শ্লথ বিয়ার, কুমীর, চিতল হরিণ, গ্রে  লেঙ্গুর এবং প্রচুর পাখি। এমনকি ম্যাকাও দেখতে পাওয়া যায় এই অরণ্যে। রয়েছে প্রচুর ময়ূর।

বত্রিশ ছত্রী , রণথম্ভোর ফোর্ট 

রণথম্ভোর ন্যাশনাল পার্কে সাফারি করার ব্যবস্থা আছে। সারাদিনে মোট দুটি শিফটে অরণ্যে ভ্রমন করা যায়। একটি সকালে, অপরটি দুপুরবেলায়। এক একটি জিপে ৬ জন করে নেয়, এরকম মোট ২০টি গাড়ি অরণ্য ভ্রমনে যাত্রা করে।জিপসি হলে ৬টি সিট্ এবং ক্যানটার ওপেন বাস হলে থাকবে মোট ২০টি সিট্। অরণ্যে গিয়ে প্রচুর ছবি তোলা যাবে। অনলাইনেও এই সাফারি বুক করে নেওয়া যায়. সেক্ষেত্রে ranathambhorenationalpark.in এই ওয়েবসাইটে যেতে হবে, অথবা ফোন করতে হবে ৯৯৫৮৮১১৯৯৪ / ৮৮২৬৬৭৮৮৮২ নম্বরে।



রণথম্ভোর অরণ্য সংলগ্ন পাহাড়ের মাথায় রয়েছে রণথম্ভোর ফোর্ট। জয়পুরের রানা সোয়াই মানসিং রণথম্ভোর অরণ্যে মৃগয়া করতে আসলে এই দুর্গে রাত্রিবাস করতেন। ফোর্ট থেকে অরণ্যের ওপর নজরদারিও চালানো হত। পাহাড়ের মাথায় থাকা এই ফোর্ট থেকে বহুদূর পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যায়। এখন এই ফোর্টকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমা দেওয়া হয়েছে। অরণ্য বেড়াতে গিয়েই কচিরা জায়গাটিও বেশ ভাল লাগবে। জলাশয় থাকায় হরিণ জল খাচ্ছে, এমন দৃশ্য চট করে ক্যামেরাবন্দী করতে ভুলবেন না নিশ্চয় !  রণথম্ভোর বেড়াতে এসে একটি গাড়ি ভাড়া করে আরও কিছু জায়গায় ঘুরে নিতে পারেন। যেমন, পদম তালাও, ত্রিনেত্র গনেশ মন্দির, সোলেশ্বর মহাদেব মন্দির, রাজবাগের ধ্বংসাবশেষ, কচিরা উপত্যকা ইত্যাদি।

ত্রিনেত্র মন্দির 

জয়পুর থেকে রণথম্ভোরের দূরত্ব প্রায় ১৬০ কিলোমিটার, গাড়িতে যেতে সময় লাগে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা মত। জয়পুর থেকে সরাসরি ট্রেন যাচ্ছে সোয়াই মাধোপুর  স্টেশনে। সোয়াই মাধপুর স্টেশনটিও দেখবার মত। এই স্টেশনটিকেও The best Tourist friendly station in India খেতাব দেওয়া হয়েছে। প্যালেস অন হুইলস, রয়্যাল রাজস্থান অন  হুইলস, মহারাজা এক্সপ্রেস এই সব বিলাসবহুল ট্রেনগুলি এই স্টেশনে দাঁড়ায়। জয়পুর থেকে রণথম্ভোর ভ্রমন সাঙ্গ করে চলে যাওয়া যায় উদয়পুরের দিকে, রণথম্ভোর থেকে উদয়পুরের দূরত্ব ৩৮৮ কিলোমিটার। চলে যেতে পারেন চিতোরগড় দেখতে অথবা একেবারে উল্টো দিকে অর্থাৎ পূর্ব দিকে চলে যেতে পারেন মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়ারে। রণথম্ভোর থেকে গোয়ালিয়ারের দূরত্ব প্রায় ২৭৮ কিলোমিটার। 

সন্ধ্যা ঘনাল রণথম্ভোরে 

রণথম্ভোর এলাকায় বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে, যে কারনে এখানকার হোটেলগুলির গায়ে যেমন একটা রয়াল ব্যাপার স্যাপার আছে, সেই কারণেই হোটেলগুলির দাম একটু চড়া।  হোটেল রণথম্ভোর বাগ  - 94140 31878 (বিলাসবহুল তাঁবু, সুইমিং পুলও আছে, বাজেট হাজার দুয়েকের কাছে), জঙ্গল রিট্রিট রণথম্ভোর - 94140 31878 (বাজেট হাজার দুয়েক), হোটেল শনি বিলাস - 73576 88676, 


No comments:

Aaj Khabor. Powered by Blogger.