Ads Top

খাজুরাহো

খাজুরাহো


অন্যরুট (বাংলা), খাজুরাহো, মধ্যপ্রদেশ, ০৮/০২/২০২১ :   অসামান্য শিল্পকলা ও স্থাপত্যের নমুনা দেখতে অবশ্যই একবার ঘুরে আসুন মধ্যপ্রদেশের খাজুরাহো থেকে। মধ্যপ্রদেশের ছাতারপুর জেলায় অবস্থিত খাজুরাহো মন্দির কমপ্লেক্স চান্দেল্লা রাজাদের আমলে গড়ে উঠেছিল। ৮৮৫ সাল থেকে ১০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছিল সুবিশাল খাজুরাহো মন্দির কমপ্লেক্স। ছিল মোট ৮৫টি মন্দির। এখন অবশ্য মাত্র ৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়েই রয়ে গিয়েছে এই খাজুরাহো মন্দির কমপ্লেক্স। বর্তমানে রয়েছে আর মাত্র ২৫টি মন্দির।


খাজুরাহো জায়গাটি মাধ্যভারতের বিন্ধ্য পর্বত এলাকার মধ্যেই পড়ে।  শহরের নামটিও খাজুরাহো। খুব বেশি হলে হাজার পঁচিশ তিরিশেক লোকের বাস এই শহরে। খাজুরাহো রেল স্টেশন থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে রয়েছে খাজুরাহো মন্দির কমপ্লেক্স। একটি অটো রিক্সা ভাড়া করে বেরিয়ে আসা যায়। সেক্ষেত্রে খাজুরাহোতে একরাত্রি থাকলেই যথেষ্ট। অবশ্য সবক'টি মন্দির খুঁটিয়ে দেখতে হলে আলাদা কথা ! 

এবার একটু ইতিহাসের কথায় আসা যাক। খাজুরাহো মন্দির নির্মিত হয়েছিল চান্দেল্লা রাজাদের আমলে। এঁরা ছিলেন বুন্দেলখন্ড অঞ্চলের রাজা। ৮৮৫ সাল থেকে শুরু হয়েছিল খাজুরাহো মন্দির নির্মাণের কাজ। সেই সময় চান্দেল্লা বংশের রাজা ছিলেন যশোবর্দ্ধন।  এঁর আমলেই তৈরি হয়েছিল চৌষট্টি যোগিনী মন্দির, মহাদেব মন্দির, লক্ষণ মন্দির এবং ব্রম্ভা  মন্দিরগুলি। ধাঙ্গা রাজার সময় তৈরি হয়েছিল বিশ্বনাথ মন্দির।  রাজা বিদ্যাধারার আমলে তৈরি হয়েছিল কাণ্ডারিয়া মহাদেব মন্দিরটি, যেটি এখনও  বিদ্যমান। ১০৫০ সালের পরের দশকগুলিতেও এই কমপ্লেক্সে গড়ে উঠেছিল আরও কিছু মন্দির। তবে এখানে হিন্দু মন্দিরের পাশাপাশি রয়েছে জৈন মন্দিরও। তাই হিন্দু এবং জৈন উভয় সম্প্রদায়ের মানুষকেই খাজুরাহোতে বেড়াতে আসতে  দেখা যায়।


যে সময় খাজুরাহোতে মন্দির গড়ে উঠেছিল, সেই সময় হিন্দু বালকদের আশ্রমে থাকতে হত, সেখানেই তাদের শিক্ষার পাঠ নিতে হত। সেই সময় তাদের ব্রম্ভচর্য্য পালন করতে হত। এরপর আশ্রম পর্ব শেষে তাদেরকে গার্হস্থ্য জীবনে প্রবেশ করতে হত। খাজুরাহো মন্দিরে যে শিল্পকলার নিদর্শন আছে, সেখান থেকেই এই গার্হস্থ্য ও সাংসারিক জীবনের পাঠ নিত সেই যুগের তরুণ ছাত্রেরা। খাজুরাহোরর মন্দির গাত্রে তাই নরনারীর সম্ভোগ কলার নিদর্শন ফুটে উঠেছে। এভাবেই সেকালে সেক্স এডুকেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এটা পরিস্কার যে, সে আমলেও তরুণ ছাত্রদের জন্যে সেক্স এডুকেশনের কথা ভেবেছিলেন চান্দেল্লা রাজারা। 


খাজুরাহোর প্রচার বাড়তে শুরু করেছিল চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং-এর বিবরণী থেকে। তিনি অবশ্য তাঁর বিবরণীতে খাজুরাহোর নির্মাণ সাল ৬৪১ বলে জানিয়েছিলেন। সেই সময় খাজুরাহোতে হিন্দু ব্রাম্ভন ও বৌদ্ধদের বসবাস ছিল বলে তাঁর বিবরণী থেকে জানা গিয়েছিল। এরপর ১০২২ সালে পারস্যের পর্যটক আল বিরুনির বিবরণী থেকেও খাজুরাহো সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। ইনি গজনীর সুলতান মামুদের পরিচিত ছিলেন। আল বিরুনী খাজুরাহোকে  জযাহুতিদের রাজধানী হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। সুলতান মামুদের নজর পড়ে খাজুরাহোর দিকে। তিনি খাজুরাহোকে আক্রমন করতে গেলে শেষ পর্যন্ত তা সফল হয় নি, কেননা তৎকালীন চান্দেল্লা রাজা বেশ কিছু মুক্তিপণ বাবদ অর্থ প্রদান করে বাঁচিয়ে নেন খাজুরাহোকে।  ১১ শতকের শেষ দিকে খাজুরাহো যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। তবে ১২ শতকে দিল্লীর সুলতান কুতুব উদ্দিন আইবক চান্দেলা রাজবংশকে আক্রমন এবং পরাজিত করেছিলেন। তার পরবর্তী সময়ে মরক্কোর পর্যটক ইবন বতুতা এসেছিলেন ভারতে, তাঁর বিবরণী থেকেও খাজুরাহো সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। 


খাজুরাহো মন্দির কমপ্লেক্সকে তিনভাগে ভাগ করা যায়. পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ। এর মধ্যে একমাত্র পশ্চিম কমপ্লেক্সের বেশ কিছু মন্দিরে অডিও বার্তার ব্যবস্থা রয়েছে। সেই অডিও বার্তায় পর্যটকদের মন্দিরগুলিওর ইতিহাস সম্বন্ধে জানিয়ে দেওয়া হয়। এই ব্যবস্থা শুধুমাত্র পশ্চিমের গ্রূপের মন্দিরগুলির জন্যেই রয়েছে। এছাড়াও পর্যটকদের জন্যে খাজুরাহো মন্দিরের প্রেক্ষাপটেই সবুজ লনের ওপর একটি 'আলো ও ধ্বনি' (Light & Sound Show) প্রদর্শনীর ব্যবস্থা আছে। প্রতি সন্ধ্যায় এই প্রদর্শনী হয়, প্রথমে ইংরেজিতে এবং পরে হিন্দিতে বলা হয়। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে খাজুরাহোতে একটি উৎসব পালন করা হয়, যার নাম 'খাজুরাহো ফেস্টিভ্যাল'। মূলত এই উৎসবে ক্লাসিকাল ডান্সের অনুষ্ঠান হয়। দেশের নামী দামী শিল্পীরা যোগ দেন এই উৎসবে। এবছর চলতি মাসের ২০ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত এই উৎসব চলবে। 


খাজুরাহোতে বছরের যে কোন সময় যাওয়া যেতে পারে, তবে গ্রীষ্মকালে খুব গরম থাকে এখানে। খাজুরাহো ভ্রমন সাঙ্গ করে চলে যাওয়া যায় ১৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইতিহাসের আর এক পাতায়, যার নাম ঝাঁসি। (ঝাঁসির ইতিহাস বা রানী লক্ষীবাঈ সম্বন্ধে বলব আর এক দিন)। খাজুরাহো ঘুরে চলে যেতে পারেন রেওয়া অরণ্য ভ্রমন করতে। খাজুরাহো থেকে মাত্র ১৬৬ কিলোমিটার দূরে সড়কপথে রেওয়া যেতে  বড়জোর ঘণ্টা চারেক সময় লাগতে পারে। অথবা ইচ্ছে করলে চলে যেতে পারেন কানহা কিংবা বান্ধবগর অরণ্যের দিকেও।

কিভাবে যাবেন : কলকাতা থেকে খাজুরাহো যাওয়ার সরাসরি কোনো ট্রেন নেই. তবে হাওড়া থেকে মির্জাপুর গিয়ে সেখান থেকে সাতনা পৌঁছে গাড়িতে চলে যাওয়া যায় খাজুরাহোতে। অথবা যে কোনো ট্রেন ধরে কানপুর চলে যাওয়া যেতে পারি, সেখান থেকে ট্রেন বদলে চলে যেতে পারেন খাজুরাহোতে। এলাহাবাদ হয়েও যাওয়া যেতে পারে।


কোথায় থাকবেন : হোটেল ক্যাসা  ডি  উইলিয়াম - 98933 98536, ইউরো ষ্টার ইন - 99812 96029, হোটেল যেন - 99108 88113, হোটেল হারমনি - 76862 74135, হোটেল খাজুরাহো ইন - 98933 88803, গ্রিনউড - 98184 57417;




No comments:

Aaj Khabor. Powered by Blogger.