Ads Top

রামায়নের আখ্যানে পুষ্ট রামেশ্বরম

রামায়নের আখ্যানে পুষ্ট রামেশ্বরম


অন্যরুট (বাংলা), তামিলনাড়ু, ভারত, ০৬/০২/২০২১ :  আজ আমাদের গন্তব্য ভারতের দক্ষিণ  দিকে তামিলনাড়ু রাজ্যে একবারে বঙ্গোপসাগরের ওপর পাম্বান দ্বীপে অবস্থিত রামেশ্বরমে। যেখানে আছে নীল সাগরের হাতছানি, পর্যটনের অসীম  কৌতুহল, শ্রীরামচন্দ্রের বীর  এবং শৈব ও বৈষ্ণব তীর্থক্ষেত্র। 

তামিলনাড়ু রাজ্যের রামানাথপুরম জেলার অন্তর্গত পাম্বান দ্বীপে অবস্থান রামেশ্বরমের। প্রতিবেশী রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা  থেকে দূরত্বও খুব বেশি নয়. বিশেষ  অনুমতি নিয়ে  মোটর লঞ্চে করেও পারাপার করা যায়. আর এই রামেশ্বরম থেকেই শ্রীলঙ্কার মধ্যে সেতু বাঁধন করে শ্রীরামচন্দ্র সমুদ্র পার করে শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলেন সীতাদেবীকে উদ্ধার করতে। সমুদ্রের তলায় পাথরের সেই রাম সেতু নিয়ে কম বিতর্ক হয় নি এতদিন ধরে. তবে রামায়ণের  মহাকাব্য সকলেরই জানা রয়েছে। তবে এই অঞ্চলে বর্তমানে মূল ভূখন্ড মণ্ডপম  থেকে পাম্বান দ্বীপ পর্যন্ত সমুদ্রের ওপর দিয়ে যে রেল সেতুটি রয়েছে, সেটি বেশ আকর্ষণীয়।

রামনাথস্বামী মন্দির 

২ কিলোমিটারের চেয়ে কিছু বেশি লম্বা এই সেতুটি দেশের দীর্ঘতম ও প্রথম সমুদ্রের ওপর রেল সেতু, যা জনসাধারণের জন্যে খুলে দেওয়া হয়েছিল ১৯১৪ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি।একে পাম্বান ব্রীজ বলে। পাশে আরো একটি গাড়ি চলাচলের সেতু রয়েছে   ,কিন্তু পাম্বান সেতু ধরে ট্রেনে চেপে রামেশ্বরমে যাওয়ার অভিজ্ঞতাই আলাদা। যেন সমুদ্রের বুকে ভেসে ভেসে  পৌঁছে যাওয়া যায়. সমুদ্রের ঢেউ একটু বড় হলে তার ছিটে এসে গায়ে লাগে। 

অগ্নি তীর্থম 

রামেশ্বরেমের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল রামনাথস্বামী মন্দির। একেবারে দক্ষিণী ধাঁচের মন্দির। এটি মূলত একটি শিব মন্দির, এবং এটি দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম। রামায়নে আছে, শ্রীলঙ্কায় যুদ্ধে যাওয়ার আগে শ্রীরামচন্দ্র এখানে শিব পূজা করে গিয়েছিলেন, এবং শোনা যায় সেই পূজার পুরোহিত নাকি ছিলেন  স্বয়ং লঙ্কাধিপতি রাবন। রামনাথস্বামী মন্দিরটি আকারে বেশ বড়, বহুদূর থেকে এর চূড়া  দেখতে পাওয়া যায়. মন্দিরের অভ্যন্তরে রয়েছে সুবিশাল একটি অলিন্দ। দ্বাদশ শতাব্দীতে পাণ্ড্য রাজারা এই মন্দিরের সংস্কার করিয়েছিলেন। বলা হয়, এখানেই সমুদ্র শান্ত হয়ে শ্রীরামের কাছে নিজেকে সমর্পন করে তাঁকে শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার পথ করে দিয়েছিলেন। মন্দিরের সন্নিকটে সমুদ্রে যে সৈকত রয়েছে, তা আজও অদ্ভুতভাবে শান্ত। এটিই অগ্নি তীর্থম, বলা হয় নিঃসন্তান দম্পতি এই সৈকতে স্নান সেরে রামনাথস্বামী মন্দিরে পুজো দিলে সন্তান লাভ করেন।

লক্ষণ তীর্থম 

রামেশ্বরম মন্দির থেকে ১ কিলোমিটার দূরে রয়েছে লক্ষণ তীর্থম। বেশ কয়েকটি মন্দির রয়েছে এখানে, মাঝখানে একটি পুস্করিণী রয়েছে। বলা হয়,   লক্ষণ এখানে শিবলিঙ্গ গড়ে পূজা করেছিলেন, তার আগে ওই পুস্করিণীরতে স্নান   সেরেছিলেন । এখানে দ্রাবিড়ীয় স্থাপত্য শৈলীতে গড়ে উঠেছে   মন্দির টি ।ভিতরে লক্ষণের একটি মর্মর মূর্তি ছাড়াও রয়েছে রাম-লক্ষণ-সীতার মূর্তি, রয়েছে হনুমানের মূর্তিও.  পাশেই  রয়েছে সীতা তীর্থম। কাছেই রয়েছে বজরংবলীর মন্দির। 

পঞ্চমুখী হনুমান মন্দির 

রামেশ্বরম বাস স্ট্যান্ড থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ভুলুন্দি তীর্থম। বলা হয়, সীতাদেবীকে উদ্ধারের পর ফের রামেশ্বরমে এসে সীতা ও  শ্রীরাম এখানে সমুদ্রে স্নান করে বিশেষ পূজা সেরেছিলেন, এরপর তাঁরা সপরিবারে পুষ্পক রথে করে ফিরে গিয়েছিলেন অযোধ্যায়। কিন্তু যাত্রা শুরু আগে তৃষ্ণার্ত সীতাদেবীর অনুরোধে এই জায়গায় সমুদ্রের মধ্যতে তীর নিক্ষেপ করে শ্রীরামচন্দ্র ঝর্নার মিষ্টি জল বের করেছিলেন সমুদ্রের মধ্যে থেকেই।  এখানে একটি কূপে দেখতে পাওয়া যায় সমুদ্রের লবণাক্ত জলের মধ্যেও পৃথকভাবে রয়েছে মিষ্টি জলের ধারা। সীতাদেবী এই জল পান করেই তৃষ্না নিবারণ করেছিলেন। এখানেই শিব লিঙ্গের পূজা করেছিলেন তাঁরা, যাঁকে ত্রম্বকেশ্বর বলা হয় । 


জলে ভাসে শিলা 

রামনাথস্বামী মন্দির থেকে ২ কিলোমিটার দূরে রয়েছে পঞ্চমুখী হনুমান মন্দির। পাতাললোকে গিয়ে প্রভু শ্রীরাম ও লক্ষণের প্রাণ বাঁচাতে পঞ্চমুখী হতে হয়েছিল বজরংবলী হনুমানকে।  এখানে রয়েছে পঞ্চমুখী হনুমান মন্দির, যেখানে হনুমানের একটি মুখ তাঁর নিজের আদলে, বাকিগুলি হল নরসিংহ, আদিবরাহ, গরুড়  ও হয়গ্রীব। এই মন্দিরেই গেলে দেখতে পাওয়া যাবে এমন কিছু পাথর এবং লাক্ষাপ্রস্তর যা  জলে ভাসে।  পাথর হয়েও জলে ভাসে। বলা হয় এই ভাসমান পাথর দিয়েই সেতু নির্মাণ করেছিল বানর সেনারা, যে সেতু দিয়ে শ্রীলঙ্কায় প্রবেশ করেছিলেন প্রভু রামচন্দ্র। 

ধনুষ্কোটি 

রামেশ্বরম ভ্রমনের আর এক প্রাপ্তি হল, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কলামের বাসভবন। ভারতের জনপ্রিয়তম রাষ্ট্রপতি তথা বিজ্ঞানী আব্দুল কলামের বাড়ি রয়েছে রামেশ্বরমেই । যদিও এখন তাঁর বাসভবনটি পরিণত হয়েছে একটি মিউজিয়ামে।  রামেশ্বরম থেকে ভারতের শেষ প্রান্তটি হল ধনুষ্কোটি।  এই জায়গাটি শ্রীলঙ্কার তালাইমান্নার থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। আগে এখানে একটি ছোট শহর ছিল, কিন্তু ১৯৬৪ সালের ভয়ংকর সাইক্লোনে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল সেই সাঁওতালি জায়গাটি। বাসিন্দাদেরকে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছিল। এখনো ধোনিষ্কটি ঘুরে আসা যায়, তবে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত এখন আর যেতে দেয় না প্রশাসন। এখান থেকে সমুদ্রের অপরূপ প্রকৃতি মন ভুলিয়ে দেয় ।

অনেকে বলেন রাম সেতুর অংশবিশেষ 

কিভাবে যাবেন : হাওড়া স্টেশন থেকে চেন্নাই গিয়ে রামেশ্বরম যাওয়ার ট্রেন ধরতে হবে.।কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বিমানে পৌঁছাতে হবে চেন্নাইয়ের মিনামবক্কম বিমানবন্দরে, তারপর সেখান থেকে রামেশ্বরম ট্রেনে, বাসে বা গাড়ি বুক করে চলে যাওয়া যেতে পারে। মাদুরাই থেকেও গাড়ি বুক করে চলে যাওয়া যায়. বাসও যাচ্ছে অহরহ। রামেশ্বরমে সাইটসিয়িং করতে হলে সেখানে অটো রিক্সা বা  সাধারণ রিক্সা বুক করে ঘুরে নেওয়া উচিত হবে। 


কোথায় থাকবেন : রামেশ্বরমে রাত্রিবাসের জন্যে নানান বাজেটের হোটেল আছে. যেমন হোটেল আম্মান রেসিডেন্সি - 63819 08772, হোটেল রামেশ্বরম গ্র্যান্ড - 04573 222 233, হোটেল রাম প্যালেস - 90923 83833, হোটেল সারা - 94427 00601, হোটেল রয়াল রেসিডেন্সি - 4892 23335, হোটেল আরেসেন ইন্টারন্যাশনাল - 88831 01101 ইত্যাদি।






No comments:

Aaj Khabor. Powered by Blogger.