Ads Top

নর্মদার উৎস্য অমরকন্টকে

নর্মদার উৎস্য অমরকন্টকে
নর্মদা কুন্ড 

অন্যরুট (বাংলা), ০৪/০২/২০২১ : ভারতবর্ষের পবিত্রতম নদী হিসেবে বলা হয়েছে নর্মদা নদীর নাম। অসংখ্য সাধুসন্ত এই নর্মদা নদীর পাশে বসে তাঁদের সাধনা করে গিয়েছেন, তপস্যায় লীন হয়েছেন। দেবাদিদেব মহাদেবের আরাধনা করে উচ্চকোটির মহাত্মাযা পরিণত হয়েছেন। বলা হয়, মহাদেবের স্বেদবিন্দু থেকে জন্ম হয়েছিল নর্মদার, যার আর এক নাম রেবা। মহাদেবের মানস কন্যা নর্মদা। আজও পুণ্যার্জনের উদ্দেশ্যে নর্মদা পরিক্রমা করেন সাধু থেকে শুরু করে সাধারণ পুণ্যার্থীরা। 

নর্মদা নদীর উত্স্যস্থল হল মধ্যপ্রদেশের অমরকণ্টক থেকে, এখান থেকেই উতপন্ন হয়ে বিন্ধ্য পর্বত ও সাতপুরা পর্বত শৃঙ্গের গা ঘেঁষে পশ্চিমবাহিনী রহস্যময়ী নর্মদা প্রবাহিত হয়ে গুজরাটের কাছে আরব সাগরে গিয়ে পড়েছে।  যাঁরা নর্মদা পরিক্রমায় অংশ গ্রহণ করেন, তাঁরা নদীর উৎস্য থেকে শুরু করে যে কোনো এক দিকের পার ধরে আরব সাগরের মোহনা পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যান আবার নৌকা করে মোহনা অতিক্রম করে উল্টো পার ধরে অমরকন্টকে ফিরে আসেন। বর্তমানে অবশ্য এই নিয়মে অনেকটা রদবদল করে নেওয়া হয়েছে, তবু সাধু সন্ন্যাসীরা পুরোন নিয়ম মেনেই চলেন এবং কঠোর ব্রত অবলম্বন করেন।

ত্রিমুখী মহাদেব 

আসুন এবার জেনে নিই,  নর্মদা নদীর উৎস্য অমরকণ্টক সম্বন্ধে।  অমরকন্টকের অবস্থান মৈকল পাহাড়ের মাথায় ১০৬৫ মিটার উচ্চতায়। গোটা এলাকাটি অরণ্যাবৃত। (কিভাবে যাবেন) পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া স্টেশন থেকে বিলাসপুরগামী ট্রেন ধরে প্রথমেই নামতে হবে পেন্ড্রা  রোড  স্টেশনে। সেই পেন্ড্রা  রোড  থেকে অনবরত বাস, ট্যাক্সি বা অটো  রিক্সা আসছে অমরকন্টকে। পেনড্রা  রোড  থেকে অমরকণ্টকের দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার।  বিলাসপুর থেকেও সরাসরি বাস আসছে এই অমরকন্টকে।  এমনকি মধ্যপ্রদেশের রেওয়া বা জব্বলপুর থেকেও বাসে চলে আসা যায় এখানে। গ্রীষ্মকালে বেশ মনোরম আবহাওয়া থাকলেও শীতকালে কিন্তু জাঁকিয়ে ঠাণ্ডা পড়ে এই অঞ্চলে। তবুও শীতকালেই যেন অমরকন্টক আরও মনোরম হয়ে ওঠে।

কপিল ধারা 

অমরকন্টকের প্রধানতম আকর্ষণ হল নর্মদাকুন্ড।  কুন্ডকে ঘিরে বেশ কিছুটা জায়গা নিয়ে তৈরি হয়েছে নর্মদামাতার মন্দির। এখান থেকেই উৎপত্তি হয়েছে নর্মদা নদীর। তবে এই কথাও না বললেই নয় যে, এই অমরকন্টক থেকেই উৎপত্তি হয়েছে আরও একটি নদীর, তার নাম শোন নদী। নর্মদাকুন্ডের মন্দিরে মোট ১৬টি মন্দির রয়েছে, তার একটিতে নিত্য পূজিতা হন নর্মদামাতা । এই মন্দির কমপ্লেক্স তৈরি হয়েছিল কলচুরি রাজাদের আমলে। অমরকণ্টকের গোটা এলাকা যেন অদ্ভুত পবিত্রতা বিরাজ করে। চারদিকের অরণ্যাবৃত পাহাড়ের প্রাকৃতিক শোভা যেন মন কেড়ে নেয়। প্রচুর পরিমাণে আয়ুর্বেদিক জড়িবুটির সংসার রয়েছে এই অমরকন্টক পাহাড়ের অরণ্যে। 

মাই কি বাগিয়া 

নর্মদাকুন্ড থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মাই কি বাগিয়া।  যা নর্মদা মাকে উৎসর্গ  করা হয়েছে। চারদিকে অরণ্যে ঘেরা এই জায়গাটি অত্যন্ত শান্ত ও নির্জন। বেশ কিছু গাছ গাছালি রয়েছে এই জায়গায়। রয়েছে প্রচুর ফুল গাছও।  যাঁরা নর্মদা পরিক্রমা করেন, তাঁরা এই মাই কি বাগিয়া জায়গাটিতে  প্রথম রাত্রিটি অতিবাহিত করেন, সেই সূত্রে এখানে সাধু দর্শন হতেই পারে। তবে এই এলাকায় প্রচুর বাঁদর আছে। খাবারের খোঁজে তারা অনেক সময় পর্যটকদের কাছে চলে আসে. তবে ভয়ের কিছু নেই।

নর্মদা মন্দিরে নর্মদা মাতা 

নর্মদাকুন্ড থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে গেলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে কপিল ধারায়। আধ্যাত্মিক জায়গা এই কপিল ধারা, উৎস্য থেকে বেরিয়ে আসার পর এটিই নর্মদা নদীর প্রথম জলপ্রপাত। পান্না সবুজ উপত্যকায়  প্রায় ১০০ ফুট উঁচু থেকে সগর্জনে নর্মদার ধারা ঝাঁপিয়ে পড়ছে নিচে। জলরাশির গর্জন ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই এই জায়গায়, আর এখানেই বসে তপস্যা করেছিলেন কপিল মুনি। অমরকণ্টকের  পাহাড় শীর্ষে রয়েছে দেশের অন্যতম প্রাচীন মন্দির ত্রিমুখী শিব। কলচুরি  রাজা কার্যদেব মহাচন্দ্র এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। পাহাড়ের পাথর কেটে এখানে নির্মিত হয়েছিল শিবের তিন মুখ, তাই এই মন্দিরকে ত্রিমুখী মন্দির বলা হয়।  অবশ্য কলচুরি রাজাদের আমলের শিল্পকর্ম দেখা যাবে নর্মদা  মন্দিরের পিছনে মাচ্ছেন্দ্রনাথ মন্দির এবং পাতালেশ্বর মহাদেব মন্দির দর্শন করতে গেলেও। দেখে নেওয়া উচিত হবে জৈন মন্দিরটিও। 

কবীর  চবুতরা 

অমরকন্টকে  বেড়াতে এসে অবশ্যই দেখে নিতে হবে সোনাক্ষীদেবীর মন্দির।  এখানে নবরাত্রীতে বেশ ভীড় হয়, মন্দির চত্বর থেকেই দেখে নেওয়া যাবে শোন নদীর ধারা বয়ে যাচ্ছে। অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকা যাবে। বলা হয়, মহাদেব যখন ত্রিপুরাসুরকে বধ করে তিন টুকরো করে ফেলেছিলেন, তখন সেই তিন টুকরোর একটি এসে পড়েছিল নর্মদাকুন্ডের কাছে, পরে সেই টুকরোর ওপরেই বসে মহাদেব বিশ্রাম নিয়েছিলেন। নর্মদাকুন্ডের উত্তর পূর্বদিকে ১০ কিলোমিটার দূরে সেখানেই গড়ে উঠেছে জলেশ্বর শিব মন্দির। শোনা যায় হর পার্ব্বতী এখানে বাস করতেন দীর্ঘ সময় ধরে। জায়গাটি বেশ নির্জন এবং নিরিবিলি। অবশ্য অমরকন্টকের সর্বত্রই নির্জনতা এবং একটা পুত পবিত্র ভাব বিরাজ করে। তাই প্রত্যেক পর্যটকের উচিত সেখানকার পবিত্রতা বজায় রেখে চলা। 

শোনমুড়া  জলপ্রপাত 

এবার বেড়াতে চলুন নর্মদাকুন্ড থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে সোনামুড়ায়। এখান থেকেই উৎপত্তি হয়েছঘে শোন নদীর। উৎপত্তি হয়েই ১০০ ফুট মত গভীর উপত্যাকার মধ্যে ঝাঁপ দিয়েছে শোন নদী। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরা এই জায়গা। বলা হয়, এখনো নাকি এই নদীর জলে সোনার গুঁড়ো পাওয়া যায়।. এই কারণেই এই নদীর নাম সোনা বা শোন নদী। অমরকন্টক থেকে বিলাসপুরের দিকে যেতে ৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে কবীর চবুতরা। সন্ত কবীর এখানে বসবাস করেছেন এবং এখানে তাঁর আশ্রম রয়েছে। শুধু তাই নয়, এখানেই তিনি মিলিত হয়েছিলেন গুরু নানকের সাথে। এখানে একটি কুন্ড আছে, যেখানে প্রতিদিন সকালে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কুন্ডের জলে আপনা আপনি ভেসে ওঠে দুগ্দ্ধ।  আপনিও সাক্ষী থাকতে পারেন সেই অপূর্ব দৃশ্যের। 

কুয়াশায় ঘেরা অমরকন্টক 

প্রায় সারা বছর পুণ্যার্থী, সাধু সন্ত  ও পর্যটকদের ভীড় লেগে থাকে অমরকন্টকে, তবে প্রতি বছর মকর সঙ্ক্রান্তির দিন এখানে পালিত হয় নর্মদা জয়ন্তী, সেই সময় এখানে যেন মানুষের ঢল নামে। সেদিন নর্মদা নদীর তীরে বিশেষ পূজারতি করা হয়। এছাড়াও হোলি এবং দীপাবলি উপললক্ষ্যেও এখানে বেশ ভীড় হয়। (কোথায় থাকবেন) অমরকন্টকে বেশ কিছু হোটেল আছে। রয়েছে বেশ কিছু ধর্মশালা এবং অতিথি নিবাস যেখানে রাত্রিবাস করা যায়। কল্যাণ সেবা সো বরফানী আশ্রম - ৯৯২৬৬২৭৩৬৪, সবাই ভ্যালি রিসর্ট - ৯৪৭৯০৬৪৯৮০, হোটেল শ্রী মাতা সদন - ৯৬৩০৩৭১৯৭৯,   মধ্যপ্রদেশ পর্যটন দপ্তরের হলিডে হোম - ৯৪২৪৭৯৬৭৭৮, এছাড়াও বেশ কিছু হোটেল ও ধর্মশালা আছে অমরকন্টকে।  





No comments:

Aaj Khabor. Powered by Blogger.