Ads Top

থর মরুভূমির আর এক প্রান্তে


অন্যরুট, ০১/০২/২০২০ : থর মরুভূমির আর এক প্রান্তে : আমরা অনেকেই রাজস্থান বেড়াতে যাই, রাজস্থান ভ্রমণকালে আমাদের রুট তালিকায় অবশ্যই থাকে জয়শলমীরের নাম, আর সেখানে গিয়ে সোনার কেল্লা না দেখলে তো রাজস্থান ভ্রমন অসম্পূর্ণ থেকে যায়; জয়শলমীর ভ্রমনের আলোচনা করব অন্য কোনো লেখায়, আজ যাব অন্য একটি রুটে। থর মরুভূমিতে বেড়াতে গিয়ে শুধুই সোনার কেল্লা দেখে যাঁদের মন ভরে না, তাঁরা অবশ্যই দেখতে যান স্যাম বা খুড়ি স্যান্ড ডিউন । কিন্তু আজ আলোচনা করব অন্য একটি মরু শহর ও  স্যান্ড ডিউন বা মরুদ্যান নিয়ে, যেখানে পর্যটকদের আহামরি ভিড় নেই, যেখানে রয়েছে অদ্ভুত রহস্যময় এক পরিবেশ। এই মরু শহরের  নাম হল ফালদি।
ফালদির হাভেলি 

জয়শলমীর থেকে যোধপুর যেতে মাঝখানে পড়বে ফালদি। মরুভূমির পটভূমিকায় ভীষণ একা এক শহর এই ফালদি। সিদ্ধুজী কাল্লার হাতে তৈরী এই শহরের আগে নাম ছিল ফলবর্দ্ধিকা, সিদ্ধু কাল্লার বিধবা কন্যা ফালা এখানে কেল্লা তৈরী করতে প্রভূত অর্থ যোগান দিয়েছিলেন, তাঁরই নামানুসারে মাতাদেবী লাট্টিয়ালের আশীর্বাদে এখানে গড়ে ওঠা জনবসতির নাম রাখা হয়েছিল ফালদি। যোধপুর থেকে ফালদির দূরত্ব প্রায় ১৪২ কিলোমিটার। ফালদিকে থর মরুভূমির 'বাফার জোন' বলা হয়, আর এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি লবন কারখানা, তাই একে  আবার লবন শহরও বলা হয়। এখানকার ঘরবাড়ি বেশিরভাগই লাল রঙের স্যান্ড স্টোন দিয়ে তৈরী।
জৈন মন্দিরের ভিতরে 

এখানে বেশ কয়েকটি হাভেলি রয়েছে, যেগুলির কয়েকটিতে রাত্রিবাস করা যায়, অবশ্য রাত্রিবাসের জন্যে সরকারি গেস্ট হাউস রয়েছে এখানে । জয়শলমীর থেকে এই শহরের দূরত্ব প্রায় ১৬০ কিলোমিটার। থর মরুভূমি হল দুনিয়ার ১৭তম বৃহত্তম মরুভূমি, ২ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার জায়গা নিয়ে এই মরুভূমির বিস্তৃতি ভারতের পশ্চিম প্রান্ত থেকে পাকিস্তানের পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত । সেই থর মরুভূমির মধ্যে ছোট্ট একটি মরু শহর এই ফালদি । আরব, মেবার ও সিন্ধের মধ্যে যে বিখ্যাত বাণিজ্য রুট ছিল তার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিল এই মরু  শহর  ফালদি । করাচির বন্দর খোলার ৪০০ বছর  আগেও এটি ছিল প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র । মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীরা অনেকেই ধনী ববণিকে পরিণত হয়েছিলেন ফালদিতে  এসে ব্যবসা করেই ।
ফালদি মাতা মন্দির 

শোনা যায়,  শের শাহের কাছে তাড়া  খেয়ে পালানোর সময় মুঘল সম্রাট হুমায়ূনের অনেক  ধান সম্পদ এখানে তুমুল বালির ঝড়ে চাপা পরে গিয়েছিলো , এখনও  নাকি এখানে বালি খুঁড়লে উঠে আসে মুঘল সম্রাটের মোহর সহ অন্যান্য সামগ্রী , এখানকার রেড স্যান্ড স্টোনের তৈরি হাভেলিগুলি এখনো যেন ফিসফিসিয়ে পুরোনো দিনের রহস্য মাখা রাজপুতানার ইতিহাস শোনাতে চায় । এখানে গেলে চান্দেল্লাদের অদ্ভুত সব অস্ত্রশস্ত্র এবং চামড়ার তৈরী আফিমের বাক্স  দেখতে পাওয়া যায় ।

ফালদি থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে রয়েছে খিচান মরুদ্যান , অপূর্ব সেই জায়গা , যেখানে মরুভূমি গিয়ে মিশেছে দিগন্তে । শীতকালে ইউরোপ, রাশিয়া, সাইবেরিয়া থেকে এখানে উড়ে আসে নানান প্রজাতির কয়েক হাজার পরিযায়ী পাখি, সেই সময়ে এই অঞ্চলের পরিবেশটাই পাল্টে। যারা পাখি দেখতে ভালো বাসেন, ছবি  তুলতে ভালোবাসেন এখানকার রংবেরঙের হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির ভিড় ও তাদের কলকাকলি তাঁদের  মুগ্দ্ধ করবেই । তবে হ্যাঁ,  ভুল করেও এখানে শীত কাল ছাড়া বেড়াতে আসার পরিকল্পনা করবেন না , কেননা এখানকার আবহাওয়া বেশ চরমভাবাপন্ন , গরম কালে এখানকার তাপমাত্রা হয় প্রায় ৫১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কাছে , আবার শীতকালে রাত্রের দিকে তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাসের নিচে। 
রেড রক রিসর্ট, ফালদি (99290 88874)

পুরোনো রাজস্থানের নিজস্বতা ও স্বকীয়তা বজায় রেখে রাজস্থানের সাবেকি  প্রথা , রীতিনীতিকে নিয়ে এগিয়ে চলা মরু শহর ফালদি এখন পর্যটনের নতুন গন্তব্য হয়ে উঠেছে । তবে এই শহরের একটা অন্যরকম বদনাও রয়েছে , এই শহরটিই হলো আমাদের দেশের একমাত্র বেটিং এর শহর , এখানকার বাসিন্দারা নাকি কথায় কথায় বাজি ধরতে ভালোবাসেন, আর সেটাও আবার বেশিরভাগই রাজনীতি নিয়ে ।
জয়শলমীর বেড়াতে গিয়ে আরও একটি জায়গা থেকে বেড়িয়ে আসতেই পারেন, সেটি হল ফসিল পার্ক, পোশাকি নাম অকল উড  ফসিল পার্ক। জয়শলমীর শহর থেকে দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার, আর জয়শলমীর - বারমের  রোড থেকে ১ কিলোমিটার এগিয়ে যেতে হয়। এখানে রক্ষিত রয়েছে প্রাগৈতিহাসিক টেরোসরাস প্রজাতির প্রাণীদের জীবাশ্ম। এই জায়গাটি পাহাড়ের দিকে এবং একটু পাথুরে অঞ্চলে অবস্থিত, এই অঞ্চল থেকে অনেক কিছুর জীবাশ্মই পাওয়া গিয়েছে। গোটা জায়গাটিকে ১৯৭২ সালে  ন্যাশনাল জিওলজিক্যাল মনুমেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া।
ফসিল পার্কে জীবাশ্ম 

এখানে বেশ কিছু প্রাচীন বৃক্ষের কাণ্ডের জীবাশ্মও  পাওয়া গিয়েছিল, যা প্রমান করে এক সময় এই অঞ্চলে হয়ত মরুভূমি নয়, কোনো অরণ্য ছিল। সবকিছুই এখানে খুব সযত্নে সংরক্ষিত রয়েছে। জয়শলমীর বেড়াতে গিয়ে সোনার কেল্লা অবশ্যই দেখবেন, কিন্তু একজন পর্যটক হিসেবে থর মরুভূমির আনাচে কানাচে এই ধরনের অন্যরুটে ভ্রমন আপনার মন্দ লাগবে না। ফালদিতে রয়েছে ফালদি মাতা মন্দির ও একটি খুব সুন্দর জৈন মন্দির। রাত্রিবাসের জন্যে এখানে রয়েছে কয়েকটি ভাল হোটেল। এখানে বিদেশিরাও বেড়াতে আসেন। রেড রক রিসর্টের ফোন নম্বর ছবিতে দেওয়া আছে।

No comments:

Aaj Khabor. Powered by Blogger.