Ads Top

বিস্ময়কর বিজলি শিব বা মহাদেব মন্দির


অন্য রুট, তীর্থ, ২০/০১/২০২০ : বিস্ময়কর বিজলি শিব বা মহাদেব মন্দির : ভারত বর্ষে রয়েছে অসংখ্য শিব মন্দির। নানান মহিমায় আবৃত সেইসব মন্দিরগুলি। আজকের তীর্থের নাম 'বিজলী শিব মন্দির'; মন  মুগ্ধ করা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের মধ্যে দেবাদিদেব মহাদেবের অধিষ্ঠান এখানে। জায়গাটি হিমাচল প্রদেশের কুলু জেলায়। হিমাচলের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র কুলু শহর থেকেই যাওয়া যাবে এই বিজলী শিব মদিরে। তবে প্রথমেই জানিয়ে রাখি, একেবারে মন্দির চত্বর পর্যন্ত গাড়ি যায় না, কিছুটা পথ হেঁটেই  উঠতে হয়, কষ্ট  না করলে যেমন কেষ্ট  মেলে না, তেমন কঙ্করময়  প্রান্ত অতিক্রম না করলে যে শংকর মিলবে না ! মোট হাজার ধাপের মত সিঁড়ি করা আছে, দেবদারু আর পাইনের ছায়াঘেরা পথে ধীরে ধীরে উঠতে হবে।প্রতিদিন বহু মানুষ এখানে আসেন। শিবরাত্রির দিনে এখানে মেলা বসে, খুব ভিড় হয় সেই সময়। 
advt.


এবারে আসি মন্দিরের কথায়। আমরা বেড়াতে গিয়ে অনেকেই সিমলা থেকে মানালি চলে যাই, আর ওই পথে মান্ডি পার হয়ে কুলু হয়েই যেতে হয়। বিয়াস নদীর ধারে ব্যস্ত শহর কুলু থেকে গাড়ি নিয়ে বিজলী শিব বা মহাদেব মন্দিরের বেশ কিছুটা চলে যাওয়া যায়। কুলু শহর থেকে মন্দিরের দূরত্ব মোট ১৪ কিলোমিটার, এর মধ্যে ১১ কিলোমিটার গাড়িতে চলে যাওয়া যাবে আর বাকি ৩ কিলোমিটার পথ পাহাড়ি পথ ধরে চলতে হবে, তবে পথশ্রম যেটুকু কষ্ট দেবে তার চেয়েও বেশি মন ভরে যাবে হিমাচলের এই তল্লাটের সৌন্দর্য্য নিরীক্ষণ করতে করতে।

বিজলি মহাদেব মন্দিরের উচ্চতা  ২৪৬০ মিটার। আর এই উচ্চতা থেকে কুলু ও পার্বতী উপত্যাকার নিসর্গ দেখে সত্যিই মন ভরে যায়। ৬০ ফুট উঁচু মন্দিরটির গঠন শৈলী এমনকিছু আকর্ষণীয় নয়, তবে এই মহাদেব মন্দিরের পিছনে যে বিষ্ময়কর ব্যাপারটি রয়েছে, তা অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। সেই ব্যাপারটি সবিস্তারে আপনাকে জানাবেন এই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত মহাশয়, তার আগে না হয় আমিই কিছুটা জানিয়ে রাখি। 

বলা হয়, এই অঞ্চলের মানুষকে একবার বাঁচিয়েছিলেন স্বয়ং মহাদেব। এখানে থাকত এক অসুর, তার নাম ছিল কুলন্ত, যে চেয়েছিল লাহুল স্পিতির উপত্যকা বন্যায় ভাসিয়ে দিতে, আর সেই জন্যে এখানকার উপত্যকায় নদীপথ আটকে বসেছিল সে। বিষয়টি ভালভাবে নেন নি মহাদেব, তিনি ওই অসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাকে মেরে ফেলেন । ওই অসুর তখন পাহাড়ের আকৃতি ধারণ করে ও দেহ রাখে। সম্ভত ওই কুলন্ত অসুরের নামেই উপত্যাকার নাম হয়েছিল কুলু। এলাকার লোকেরা এখানকার পাহাড়ের মাথায় শিবকে পুজো দিতে থাকেন।
বিজলি শিব মন্দিরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপারটি হল, প্রতি ১২ বছর অন্তর এখানে বজ্রপাত হয় একেবারে মন্দিরের ওপর, সেই বজ্রপাতে মন্দিরের মধ্যে থাকা শিবলিঙ্গটি টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে যায়। এরপর মন্দিরের প্রধান পুরোহিত আশেপাশের গ্রামগুলিতে যান ভিক্ষা করতে, গ্রামবাসীরা তাঁকে চিনি ও মাখন (ঘরে বানানো লবন মুক্ত মাখন)  ভিক্ষা দেন, পুরোহিত সেই মাখন ও চিনি দিয়ে শিবলিঙ্গটিকে  পুনরায়  জুড়ে দেন, কয়েক মাসের মধ্যেই সেই শিবলিঙ্গ ফের আগের আকারে ফিরে যায় । এভাবেই  চলছে যুগের পর যুগ। মহাদেবের নির্দেশেই দেবরাজ ইন্দ্র প্রতি বারো বছর অন্তর এখানে বজ্রপাত করে চলেন, এমনটাই মনে করেন এখানকার মানুষ। ইন্দ্রের নিক্ষিপ্ত সেই বজ্র যাতে সাধারণ  মানুষের কোনো ক্ষতি না করে, তাই প্রতিবার নিজের ওপরেই তা নিয়ে নেন কৃপালু মহাদেব। 


বিশ্বাস অবিশ্বাস সবটাই আপনাদের হাতে। তবে এটা ঠিক যে আমাদের দেশে রয়েছে অসংখ্য শিব মন্দির, তাদের মধ্যে এমন কিছু শিব মন্দির রয়েছে, যেগুলিকে ঘিরে থাকে নানান অলৌকিক ঘটনা প্রবাহ। বিজলি শিব মন্দির তাদের মধ্যে একটি। তবে বিশ্বাস করা বা না করা মানুষের ওপর নির্ভর করছে। 'মানো  তো শঙ্কর, না মানো তো কঙ্কর'। বিজলি শিব মন্দিরে শেষবার গত ২০১০ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর বজ্রপাত হয়েছিল। সেইদিন এই মন্দির ছাড়াও বজ্রপাত হয়েছিল মা দূর্গা খাড়াহল উপত্যকাতে।

বাসেও যাওয়া যেতে পারে এই মন্দির দেখতে, কুলু বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস ছাড়ে, আপনাকে নামিয়ে দেবে চান্সারি গ্রামে, সেখান থেকেই সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠে যেতে হবে। কাছাকাছি রয়েছে বিয়াস ও পার্বতী নদীর সঙ্গম। যাঁরা ছবি তুলতে ভালবাসেন, তাঁদের এই জায়গাকে স্বর্গ বলে মনে হবে। বিজলি মহাদেব মন্দিরের পাশ থেকে গোটা উপত্যাকার ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ পাওয়া যায়। এখানে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফে চালু হয়ে গিয়েছে, তাই মনোবাসনার সাথে সাথে উদরপূর্তির চলতে পারে এখানে বেড়াতে এলে। 

advt.



No comments:

Aaj Khabor. Powered by Blogger.