Ads Top

প্রয়াগরাজ, উত্তর প্রদেশ

 দেশের ভ্রমণ
কুম্ভের স্নান 

অন্যরুট, ৩১/০১/২০২০ : প্রয়াগরাজ :  আজ আমাদের গন্তব্য হল উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজ। যেখানে রয়েছে ত্রিবেণী সঙ্গম, যাকে একটি তীর্থ ক্ষেত্রে বলা চলে, যেখানে রয়েছে ইতিহাস, আধ্যাত্মিকতা, যেখানে রয়েছে হিন্দু, মুসলিম এবং বৌদ্ধ ধর্মের নানান স্মৃতিমাখা পটভূমি, যেখানে রয়েছে নিখাদ পর্যটন, সেই প্রয়াগরাজে।
বহু প্রাচীন এই শহর প্রয়াগরাজ। এই শহরের উল্লেখ রয়েছে বেদের পরিশিষ্টে, মহাভারতে, সূর্য পুরাণ সহ অন্যান্য পুরাণেও । ইতিহাসের পাতাতেও এই শহরের উপস্থিতি রয়েছে উজ্জ্বলভাবে। এককালে এই শহরের নাম ছিল প্রয়াগ, পরে মুঘল আমলে সম্রাট আকবরের বদান্যতায় এই শহরের নাম পরিবর্তিত হয়ে যায় এলাহাবাদে, তারও পরে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বদান্যতায় এই শহরের নতুন নাম হয় প্রয়াগরাজ। বর্তমানে স্মার্ট সিটির তকমা পেয়ে আধুনিক  হয়ে উঠেছে এই প্রয়াগরাজ শহর। শহরের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠে থেকে ৩২২ ফুট। 
সঙ্গমের কাছে নৌকার ঘাট 

কলকাতা থেকে নানাভাবে পৌঁছানো যায় উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে। কলকাতা থেকে সড়কপথে প্রয়াগরাজের দূরত্ব হল ৭৯৩ কিলোমিটার। ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে অনায়াসে  প্রয়াগে পৌঁছে যাওয়া যেতে পারে। কলকাতা থেকে প্রয়াগরাজে যাওয়ার সরাসরি বাস সার্ভিস নেই, তবে বেনারস পর্যন্ত রয়েছে, বেনারস থেকে বাস পরিবর্তন করে চলে যাওয়া যেতে পারে, যদি সড়কপথেই যেতে চান। তবে সেটা আমি কখনোই পরামর্শ  দেব না, তার চেয়ে অনেক ভাল ট্রেনে করে পৌঁছে যাওয়া। 
কলকাতা থেকে অনেক ট্রেন রয়েছে প্রয়াগরাজে  পৌঁছনোর জন্যে। উদ্যান আভা তুফান এক্সপ্রেস,  লাল কেল্লা এক্সপ্রেস,
হাওড়া  জং  এক্সপ্রেস,  কালকা মেল্, মুম্বই মেল্ (ভায়া এলাহাবাদ), বিভূতি এক্সপ্রেস এই ট্রেনগুলিতে টিকিট কেটে নেওয়া উচিত হবে। কলকাতার দমদম বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ফ্লাইট রয়েছে আকাশপথে উড়ে প্রয়াগরাজে পৌঁছনোর জন্যে, ইন্ডিগো বা ইয়ার ইন্ডিয়ার দপ্তরে যোগাযোগ করে দেখে নিতে পারেন, তবে কোনটা সরাসরি আর কোনটি ভায়া ফ্লাইট সেটা দেখে নেবেন। 
এলাহাবাদ ফোর্ট 

এবার আসি বেড়ানোর কথায়। সপ্তাহান্তে  বেড়াতে যাওয়ার গন্তব্য হিসেবে প্রয়াগরাজ ভ্রমন করলে বেড়ানো, ইতিহাস দর্শন ও পুন্য লাভ তিনটিই  হবে। প্রয়াগরাজের অবশ্য দর্শনীয় হল ত্রিবেণী সঙ্গম। এখানেই মিলিত হয়েছে গঙ্গা ও যমুনা নদী দুটি, বলাহয় এটি তিন নদীর সঙ্গম, এখানে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদীর সঙ্গম রয়েছে, কিন্তু সরস্বতী নদী অন্ত:সলিলা হাওয়ায় তাকে দর্শন করা যায় না। ঋকবেদে রয়েছে, প্রয়াগের ত্রিবেনীতে স্নান করলে স্বর্গলাভ হয়। এখানে গঙ্গা ও যমুনার মিলন স্থলটি অপূর্ব, যেন কত যুগের পাপ-পুণ্যের খতিয়ান বয়ে নিয়ে আসছে হিমালয় থেকে ধরাতলে।
এখানে গঙ্গার জলের রং সাদা এবং যমুনার জলের রং সবুজ, ফলে দুই নদীর জলকে আলাদাভাবে চিনে নেওয়া যায়, মিলনের আগে পর্যন্ত। প্রয়াগের ত্রিবেণী হল সেই জায়গা যেখানে স্বয়ং তথাগত বুদ্ধদেব স্নান করেছিলেন, আর এখানেই প্রতি ১২ বছর অন্তর মহা সমারোহে উদযাপিত হয় কুম্ভ মেলা। ১৯৪৮ সালে অন্তেষ্টির পর গান্ধীজির চিতাভস্ম বিসর্জন দেওয়া হয়েছিল এই ত্রিবেণী সঙ্গমে।
অক্ষয় বট 

এলাহাবাদ স্টেশন চত্বর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এলাহাবাদ ফোর্ট, একেবারে গঙ্গা আর যমুনা নদীর ধারেই, এখানে ১৫৮৩ সালে মুঘল সম্রাট আকবর বিশালাকার এই ফোর্ট নির্মাণ করেছিলেন। ত্রিবেণী সঙ্গমে যাওয়ার জন্যে যেখান থেকে নৌকাগুলি ছাড়ে সেখান থেকেই নৌকা করে বাইরে থেকে দর্শন সেরে নিতে হবে এই দুর্গের, কেননা এখন আর দুর্গের ভিতরে সাধারণের প্রবেশের নিয়ম নেই (একমাত্র কুম্ভ মেলার সময় অনুমতি মেলে)। দুর্গের মধ্যে রয়েছে বিশালাকার অক্ষয়বটবৃক্ষ , একসময় অনেকে আত্মহত্যা করত ওখানে। দুর্গের নিচের দিকে রয়েছে পাতালপুরী মন্দির, অনেকে ওটাকেই নরক বলে মনে করে।
চন্দ্র শেখর আজাদ পার্ক 

এলাহাবাদ বা প্রয়াগরাজ ভ্রমণে আর এক আকর্ষণ হল আলফ্রেড পার্ক বা চন্দ্র শেখর আজাদ পার্ক। এখানেই অসম যুদ্ধে বীরের মত লড়াই চালিয়ে শেষে মৃত্যুবরণ করেছিলেন বিপ্লবী  চন্দ্র শেখর আজাদ। আগে নাম ছিল আলফ্রেড পার্ক, পরে শহিদ বিপ্লবীর নামে নামকরণ করা হয়, চন্দ্র শেখর আজাদ পার্ক। বিশালাকার এই উদ্যানে বিপ্লবীর নামে রয়েছে স্মৃতি ফলক, ওখানে গেলে দেখতে পাওয়া যাবে, যে গাছের আড়াল থেকে তিনি অসম লড়াই  করে গিয়েছিলেন জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত। এই উদ্যানে রয়েছে পঞ্চম জর্জ এবং ভিক্টরিয়ার বড় মূর্তি। কাছেই রয়েছে এলাহাবাদ মিউজিয়াম, যেটি অবশ্যই  দ্রষ্টব্যঃ।
আনন্দ ভবন 

এই শহরের আর এক আকর্ষণ হল আনন্দ ভবন, এটি হল নেহেরু পরিবারের পুরানো বাসভবন। মতিলাল নেহেরু ও জহরলাল নেহেরুর ব্যবহৃত বহু সামগ্রী নিয়ে এখানে গড়ে উঠেছে একটি মিউজিয়াম। একটা সময় বহু বিপ্লবী, স্বদেশী ও রাজনৈতিক মানুষ এখানে বৈঠক করে গিয়েছেন নানা সময়। চীন এবং অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা নানান আসবাবপত্র ছাড়াও অনেক মূল্যবান  ছবি দেখতে পাওয়া যাবে এই মিউজিয়ামে।  এই মিউজিয়ামটি খোলা থাকে সকাল ৯:৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৫:০০ মিনিট পর্যন্ত। 

খসরু বাগ 

প্রয়াগরাজে বেড়াতে এসে দেখে নিতে পারেন খসরু বাগ, এটি আসলে মুঘল রাজ পরিবারের সমাধিক্ষেত্র, ৪০ একর জমি নিয়ে বিশালাকার পাঁচিলের ওপারে এই উদ্যানেই সমাহিত করা রয়েছে মহারাজ ভগবন্ত দাসের কন্যা এবং জাহাঙ্গীরের রাজপুত স্ত্রী শাহ বেগম,  জাহাঙ্গীরের জ্যেষ্ঠপুত্র যুবরাজ খসরু ও তার মা নিথর বেগম, খসরুর বোন বা সম্রাট জাহাঙ্গীরের কন্যাকে। খসরুবাগের অবস্থান এলাহাবাদ স্টেশন থেকে সামান্য দূরত্বেই।
এছাড়া শহরের প্রাণ কেন্দ্রে রয়েছে সপ্তম সেইন্টস চার্চ, যাকে পাথ্থর গির্জা বলা হয়। দেখে নিতে পারেন এখানকার এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়। অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনের আদি বাড়ি এই শহরেই, যেখানে থাকতেন অভিনেতার পিতা  কবি হরিবংশ রায় বচ্চন। 

প্রয়াগরাজের হোটেল - প্রচুর হোটেল রয়েছে এখানে। বিশেষ করে স্টেশন চত্বরে রয়েছে  নানারকম মানের 
প্রচুর হোটেল। এই হোটেলগুলিতে  যে সারা বছর খুব ভিড় থাকে তা নয়, মোটামুটি প্রয়াগরাজে পৌঁছালেই হোটেলে রুম অনায়াসেই পাওয়া যায় বলে আর এখানে নতুন করে কোনো হোটেলের নাম দিলাম না। ওখানে গেলেই হোটেল পেয়ে যাবেন, একমাত্র কুম্ভ মেলার সময় ছাড়া। তবু যদি কারোর হোটেল সম্পর্কে জানার দরকার হয়, তাহলে কমেন্টে গিয়ে লিখবেন, তাহলেই জানিয়ে দেব। 

No comments:

Aaj Khabor. Powered by Blogger.