Ads Top

মৈরাং ও লোকটাক লেক

দেশের ভ্রমণ

অন্যরুট, ৩০/০১/২০২০ : মৈরাং ও লোকটাক লেক - উত্তর পূর্ব ভারতে অনেকেই বেড়াতে যান, তবে বেশিরভাগ পর্যটকের গন্তব্য থাকে গৌহাটি, শিলং, কাজিরাঙ্গা, মৌসিনরাম, শিলচর, আগরতলা বা হয়ত অরুণাচল প্রদেশের দিকে। আজ আমরা আলোচনা করব মনিপুর রাজ্যে অবস্থিত মৈরাং ও লোকটাক লেক নিয়ে। বেড়াতে যাওয়ার অসাধারন গন্তব্য এই দুটি জায়গা। এখানে আসতে  হলে অবশ্যই মনিপুরের রাজধানী ইমফল হয়ে আসতে হবে।
মনিপুর রাজ্যটি ভারতের উত্তর পূর্বে সেভেন সিস্টার্সের অন্যতম। এই রাজ্যের উত্তর দিকে রয়েছে নাগাল্যান্ড রাজ্য, দক্ষিণ দিকে রয়েছে মিজোরাম, পশ্চিম দিকে রয়েছে আসাম এবং পূর্ব দিকে রয়েছে মায়ানমার দেশটি। মৈরাং আর লোকটাক লেকে বেড়াতে যেতে হলে প্রথমেই পৌঁছে যেতে হবে মনিপুরের রাজধানী ইমফলে । তাহলে প্রথমেই দেখে নেওয়া যাক কিভাবে পৌঁছানো যাবে ইমফলে। 

ইমফল যাওয়ার পথে 

মনিপুরের  রাজধানী ইমফলে এখনো পর্যন্ত পৌঁছায়নি ভারতীয় রেল। তাই কলকাতা থেকে দুভাবে চলে যাওয়া যেতে পারে সেখানে। প্রথমত, দমদম বিমান বন্দর থেকে সরাসরি বিমানে পৌঁছে যাওয়া যেতে পারে ইমফল। সময় লাগে প্রায় ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। অথবা কলকাতা থেকে বিমানে বা ট্রেনে করে গৌহাটি পৌঁছে যান, সেখান থেকে বিমানে অথবা গাড়িতে চলে যাওয়া যেতে পারে ইনফলে। গৌহাটি থেকে ইমফল যেতে বিমানে সময় নেবে ৫৫ মিনিট। আর সড়কপথে গৌহাটি থেকে ইমফলের  দূরত্ব প্রায় ৪৯০ কিলোমিটার। তবে সময় বাঁচাতে বিমানে যাওয়াই  ভাল।
মনিপুরে পাহাড়ি সৌন্দর্য্য 

প্রথম দিনেই ইমফল শহরটি ঘুরে নিন। প্রথমেই চলুন কাংলা প্যালেস। এটি ছিল মিতেই রাজাদের প্রাসাদ। একটা সময় ইমফল নদীর দুই পাড়েই ছিল রাজ প্রাসাদ, কিন্তু কালের নিয়মে এখন নদীর পশ্চিম পারেই রয়ে গিয়েছে প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ। কাংলা কথাটির মানে হাল শুকনো জমি। চীন থেকে যুদ্ধ জয় করে এসে এখানে  নিজের সাম্রাজ্য বিস্তার করে প্রাসাদ তৈরী করেছিলেন রাজা খাগেম্বা। এই প্রাসাদটি ইতিহাস ও নৃতত্বের দিক থেকে যথেষ্ট মূল্যবান। পাশেই রয়েছে মনিপুরের সবচেয়ে বড় শ্রী গোবিন্দজির মন্দির। 
নেতাজি সুভাষ মিউজিয়াম , মৈরাং 

এরপর দেখে নেওয়া উচিত হবে মনিপুর স্টেট্ মিউজিয়ামটি। এছাড়া এই শহরের অন্যান্য আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে একটি আর্ট মিউজিয়াম, মাতাই  গার্ডেন  নামের সুসজ্জিত একটি ইকো পার্ক, ইমফল ওয়ার সিমেট্রি। যদি চান, তাহলে বিকেলবেলায় শপিং করতে পারেন এখানকার বিখ্যাত খোয়াইরামবান্ধ মার্কেটে।ইমফলে একটি রাত্রি কাটিয়ে পরের  দিন চলুন ইমফল শহর  থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে মৈরাং শহরে। 

কাংলা প্যালেস 

মৈরাং শহরটি যে বাঙালি সন্তানের  স্মৃতিধন্য তিনি হলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। নেতাজি এখানেই ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির (INA) সদর দপ্তর খুলেছিলেন, আর বার্মা দিয়ে এসে মনিপুরের এই অঞ্চলকে প্রথম বার স্বাধীন ভারত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। ব্রিটিশ আমলেও এখানে সগৌরবে উড়তো  ভারতীয় তেরঙ্গা। ১৯৪৩ সালের ৩০শে  ডিসেম্বর নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু প্রথমবার আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ারের জিমখানা মাঠে তেরঙ্গা উত্তোলন করে বলেছিলেন এই জায়গা হল স্বাধীন ভারতের মাটি। সেই সময় আইএনএর চিফ নেতাজিকে স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল, যাকে  সেই সময় মান্যতা দিয়েছিল বিশ্বের ১৮টি দেশ। 
লোকটাক লেক 

স্বাধীন ভারত হিসেবে ঘোষণা করে মৈরাংয়ে ১৯৪৪ সালের ১৪ই এপ্রিল  তেরঙ্গা উত্তোলন করেছিলেন আইএনএর কর্নেল শওকত আলী মালিক। এখানেই আছে একটি মিউজিয়াম যেখানে আইএনএ ও নেতাজির স্মৃতিধন্য অনেক সামগ্রী রক্ষিত রয়েছে। মৈরাংয়ের উচ্চতা প্রায় ২৫১৩ ফুট, শীতকালে বেশ ঠান্ডা পরে এখানে। মৈরাং জায়গাটিতে  খুব প্রচলিত রয়েছে একটি উপকথা, যাকে বলে খানবা - থোইবীর উপাখ্যান। থোইবী ছিলেন এখানকার রাজা ওয়াঙ্গন নীংথু চিঙ্কু নাহা তেলহিবার মেয়ে এবং থানবা ছিলেন এখানকার এক অনাথ বালক। এদের উপাখ্যান এখানে খুব জনপ্রিয়। এখানকার গাংখালেইকাই গ্রামে সযত্নে রক্ষিত রয়েছে এই দুই নায়ক নায়িকার বহু প্রাচীন বস্ত্র। এখানকার লর্ড থাংজিঙের মন্দিরটি খুব প্রসিদ্ধ। 
লোকটাক লেকে ভাসমান হোমস্টে 

মৈরাং থেকে লোকটাক লেকের দূরত্ব মাত্র সাড়ে ৭ কিলোমিটার। লোকটাক হল বিশ্বের একমাত্র ভাসমান অরণ্য। বিশাল জলরাশির মাঝে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে একাধিক পাহাড়, এখানে সেগুলিই হল আইল্যান্ড। উত্তর পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় পরিস্কার ও মিষ্টি জলের হ্রদ হল এই লোকটাক লেক; দ্বীপগুলিও যেন এখানে ভেসে ভেসে বেড়াচ্ছে। এখানেই রয়েছে কেইবুল লামজাও অভয়ারণ্য, যেখানে দেখতে পাওয়া যায় সাঙ্গাই (এক ধরনের বিরল প্রজাতির হরিণ, যেটি মনিপুরের রাজ্য পশু হিসেবে চিহ্নিত). এই অভয়ারণ্যটিকেই বিশ্বের একমাত্র ভাসমান অরণ্য বলা হয়।এই লেকের ধার ধরেই গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি গ্রাম, যাদের জীবিকা নির্বাহ হয় এই লেককে ঘিরেই।
এখানে ফুবালা বলে একটি জায়গা রয়েছে যেখানে পর্যটকদের জন্যে রয়েছে নানা রকম ওয়াটার স্পোর্টসের আয়োজন, লোকটাক লেকে যে দ্বীপগুলি রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল সেন্ডরা আইল্যান্ড, এখানে নৌকায় করে পৌঁছাতে হয়, এখানে থাকার জন্যে একটি সরকারি ট্যুরিস্ট গেস্ট হাউস আছে, রয়েছে একটি ক্যাফেটেরিয়াও। 

সাঙ্গাই 

হাতে মাত্র চার-পাঁচদিন সময় নিয়ে পরিবার সমেত ঘুরে আসতে পারেন মনিপুরের এই জায়গাগুলি থেকে, ভাল লাগবে। ইম্ফলের হোটেল - ফৌ ঐ বি হোটেল - 076400 56789, হোটেল সিটি সেন্টার  0385 244 5533, হোটেল আনন্দ কন্টিনেন্টাল - 0385 244 9422, দ্য ক্লাসিক হোটেল - 0385 244 3967, সাঙ্গাই কন্টিনেন্টাল - 70850 10773.
লোকটাক / মৈরাংয়ের হোটেল - মাইপ্যাকচাও হোমষ্টে - 98563 56993, হোটেল এলিগেন্স - 89747 92955, লেক ভিউ হোটেল - 87300 69084, লোকটাকে একোয়ামেরিন ফ্লোটিং হোমস্টে - 80149 21286 
মনিপুরে সাইট সিয়িং করার জন্যে হোটেলের ট্র্যাভেল ডেস্কের শরণাপন্ন হওয়াই সবচেয়ে ভাল এবং বিশ্বস্ত।আর যদি মনিপুরে বেড়াতে গিয়ে সরকারি সাহায্য, ইনফরমেশন সেন্টার, সরকারি হোটেল বা সরকারি প্যাকেজের দরকার হয় তাহলে কলকাতার মনিপুর হাউসে গিয়ে একবার যোগাযোগ করে নিন, আপনার মনিপুর ভ্রমন হয়ত অন্য্ মাত্রা পেতে পারে। কলকাতার ঠিকানা - ২৬, রোল্যান্ড রো, বালিগঞ্জ, কলকাতা - ৭০০ ০২০, ফোন - 2475 8163;

No comments:

Aaj Khabor. Powered by Blogger.