Ads Top

দার্জিলিং পর্ব ৫

 দেশের ভ্রমন
মিরিকের সুমেন্দু লেক 

অন্যরুট, ০৯/১২/২০১৯, দার্জিলিং পর্ব ৫ : আজ আমাদের মিরিক ভ্রমণের দিন, তাই এক এক করে মিরিকের দর্শনীয় সব জায়গাগুলো ঘুরে নেব; তার আগে জেনে নেওয়া যাক মিরিক সম্বন্ধে কয়েকটি কথা;  মিরিক জায়গাটি চারদিকে পাহাড় ঘেরা ছোট্ট একটি শহর,  মিরিক লেককে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে পর্যটনকেন্দ্র। একটা সময়ে এই জায়গাটিতে লেক ছিল না, পাহাড়ের কোলে ছিল শুধুই অরণ্য, আর সপ্তাহের একটি দিন এখানে একটি স্থানীয় হাট বসত, আশেপাশের চা বাগানগুলো থেকে স্থানীয় মানুষরা এসে জিনিসপত্র কেনাকাটা করত; জায়গাটির উচ্চতা ৫৯০৪ ফুট; মিরিক নামটি বেশ মিষ্টি, কিন্তু শুনতে মিষ্টি লাগলেও শব্দটির মানে কিন্তু একটুও সুন্দর নয়, লেপচা শব্দ মির-ইয়ক থেকে এসেছে মিরিক নামটি, যার অর্থ হল পুড়ে যাওয়া অরণ্য।
টিমলিং ভিউ পয়েন্ট 

তাহলে কি কোনো সময়ে এখানে দাবানল লেগেছিল ! নাকি উন্নয়নের জন্যে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এখানকার অরণ্য ! ১৯৬৯ সালে এই জায়গাটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রকল্প হাতে নেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তার আগে ইংরেজ আমলে চা বাগানের সাহেবরা এই জায়গায় পোলো খেলতে আসতেন। এই জায়গাটাতে প্রচুর পরিমাণে ঘাস জাতীয় গাছের জঙ্গল ছিল, যাকে স্থানীয়রা 'ভোজো' বলে ডাকে। ১৯৭৪ সালে এখানে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার কাজে হাত দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার, পাশের থুরবো টি এস্টেট থেকে ৩৩৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে তৈরী হয় মিরিক পর্যটন কেন্দ্র। তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়, তবে ১৯৭৯ সালে যখন কাজ শেষ হয়েছিল, তখন রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু; 
গোল পাহাড় ভিউ পয়েন্ট 

মিরিকে মাটি খুঁড়ে বিশাল একটি কৃত্রিম লেক তৈরী করা হয়, যার নাম সুমেন্দু লেক; এই লেকটিই হল মিরিক পর্যটনের মুখ্য আকর্ষণ। সুমেন্দু লেকের ধারে চারপাশটা বেশ সুন্দর উদ্যান তৈরী করা হয়েছে, যার নাম  সাবিত্রী পুষ্পোদ্যান, সাবিত্রী থাপা বাস করতেন এখানেই, এবং তিনি ছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের শহীদ একনিষ্ঠ সেনা, তাঁর নামেই রাখা হয়েছে এই উদ্যানের নাম; 

দেবীস্থান মন্দির 

সুমেন্দু লেকটি খুব সুন্দর, বোটিংয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে, কাশ্মীরের মত এখানেও লেকের জলে শিকারা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো যায়; লেকের ওপর রয়েছে ছোট একটি পুল ওপারে যাওয়ার জন্যে, ঐ পুলের নাম ইন্দ্রেনি পুল, ইন্দ্রানী থাপা ছিলেন আর এক শহীদ স্বাধীনতা সংগ্রামী , যিনি আজাদ হিন্দ ফৌজের হয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁর নামে এই পুলের নাম রাখা হয়েছে। 

সুমেন্দু লেক পার করে ওপারে পাইনবনের মধ্যে দিয়ে কিছুটা হেঁটে আর সামান্য পাহাড়ে চড়ে দেখে নেওয়া উচিত হবে  দেবীস্থান  মন্দির। মিরিকে রয়েছে বোকার গেদর চোখরলিং মনাস্ট্রি, এখানে  গেলে যেমন অসামান্য প্রাকৃতিক দৃশ্যের সাক্ষী হবেন, তেমন বোকার রিমপোচের ইতিহাস জানতে পারবেন, যাঁর পুনর্জন্ম হয়েছিল। এখানকার ডন  বসকো চার্চটিও বেশ ভাল লাগবে। রয়েছে আরো এক মনাস্ট্রি, নাম তামাং মনাস্ট্রি।
সুইস কলোনি 

এখানকার টিংলিং ভিউ পয়েন্ট অবশ্য দ্রষ্টব্যঃ, মিরিক থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে  সৌরেনি  গ্রামের এই ভিউ পয়েন্ট থেকে মোট তিনটি চা বাগান ছাড়াও মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়. চা বাগানগুলি যেন আকাশের বুকে বেশিরকম ঢেউ খেলানো। ভাল লাগবে গোলপাহাড় ভিউ পয়েন্ট এবং চমং টি এস্টেট।  
মিরিক শহর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় না, শহরের সামান্য উঁচুতে রয়েছে সুইস কলোনি বলে একটি জায়গা, সেই জায়গাটির একটি অংশ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দৃশ্যমান। সুইস কলোনি খুব সুন্দর একটি কমপ্লেক্স, যেখানে গেলে মনে হবে আপনি সুইজারল্যান্ডের কোনো এক গ্রামে গিয়ে পৌঁছে গেছেন, প্রত্যেকটি বাড়ি সেভাবেই তৈরী আর সেভাবেই সাজানো। আসলে এটি জিটিএ পরিচালিত একটি  হোটেল ,  এখানে আপনিও থাকতে পারেন ইচ্ছে করলে। বুকিং করতে পারেন কলকাতার সল্ট লেকের গোর্খা ভবন  থেকে। সুইস কলোনির  পাশেই রয়েছে একটি হেলিপ্যাড।
মিরিক ভ্রমন সঙ্গে করে ফিরে চলা 

মিরিকে রাত্রিবাসের জন্যে রয়েছে নানান বাজেটের হোটেল, যেমন হোটেল জগজিৎ - 0354 224 323 (১৩০০/-),  হোটেল ব্লু লেগুন - 77973 82052 (১৪০০/-), দ্য পার্ক - 98007 07039 (১৫০০/-), রডোডেনড্রন ডেল রিসর্ট - 89673 85256 (১৫০০/-), হোটেল বিরাজ -- 63707 86778 (১৬০০/-), প্রধান হোটেল - 84363 23111 (২৪০০/-) ইত্যাদি। (অগ্রিম বুকিং করলে ফোন করে হোটেলের রেট যাচাই করবেন, রেট বদলে যায় মরসুম অনুযায়ী).মিরিক থেকে রোহিনী হয়ে একটি পথ চলে গিয়েছে কার্শিয়াঙে। সেই পাথেই  পড়ে  বিখ্যাত মকাইবাড়ি টি এস্টেট। পাতা তুলে কিভাবে চা তৈরী করা হয় সেটা দেখতে দেয় মাকাইবাড়ি চা বাগান কতৃপক্ষ , উৎসুকরা গিয়ে দেখতে পারেন। মিরিক থেকে আর একটি পথ নেমে গিয়েছে শিলিগুড়িতে। মিরিক থেকে শিলিগুড়ির দূরত্ব ৪৬.৬ কিলোমিটার। গাড়িতে সময় লাগবে দেড় ঘন্টা মত ; মিরিকের সাইট সিয়িং করার জন্যে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে ভাড়া গাড়ি পেয়ে যাবেন। ঐ স্ট্যান্ডেই সাইনবোর্ডে পরিষ্কার করে লেখা রয়েছে, কোন কোন জায়গা ঘুরতে কত টাকা লাগবে।(সমাপ্ত) 

No comments:

Aaj Khabor. Powered by Blogger.