রাজস্থান পর্ব - ২
অন্যরুট, ০৭/১২/২০১৯ : রাজস্থান পর্ব - ২ : জয়পুরে দ্রষ্টব্যঃ রয়েছে অনেক তাই একে একে দেখে নিতে হবে, সব থেকে ভাল হয় যদি একটা অটোরিক্সা বা গাড়ি সারাদিনের জন্যে বুক করে নিয়ে সাইট সিয়িং করে নেওয়া যায়; জয়পুর হল রাজস্থানের রাজধানী এবং সেই রাজ্যের সবচেয়ে বড় শহর; ১৭২৭ সালে এই নগরের পত্তন হয়েছিল রাজা জয়সিংহের (২য় ) হাত ধরে; রাজা জয় সিংহের রাজধানী ছিল আমের শহরে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জল সংকট এই দুইয়ের চাপে পড়ে তিনি আমের থেকে রাজধানী সরিয়ে নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন।
রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরের রূপকার ছিলেন এক বাঙালি স্থপতি, নাম বিদ্যাধর ভট্টাচার্য্য। তাঁর তত্বাবধানেই বাস্তু শাস্ত্র ও শিল্প শাস্ত্র মেনে তৈরী করা হয় জয়পুরকে। রাজা জয় সিংহের নামেই শহরের নাম রাখা হয় জয়পুর। গোটা শহরের বেশির ভাগ বাড়ির রং গোলাপি তাই এই শহরকে 'পিঙ্ক সিটি' বলে ডাকা হয়;
জয়পুর শহরে দ্রষ্টব্যঃ অনেক, তাই এবার শুরু করা যাক সাইট সিয়িং। আমের থেকে রাজধানী স্থানান্তরিত করে জয়পুরে এসে মহারাজা সোয়াই জয় সিংহ (২য় ) ১৭২৭ সালে তৈরী করেছিলেন সিটি প্যালেস। এই প্রাসাদের মোট তিনটি প্রবেশ তোরণ রয়েছে, একটি হল জালেব চকের কাছে উদয় পোল, আরেকটি রয়েছে জন্তর মন্তর এর কাছে বীরেন্দ্র পোল এবং আরেকটি হল ত্রিপোলিয়া (পোল মানে তোরণ).; উদয় পোল দিয়ে প্রবেশ করলে পৌঁছে যাওয়া যাবে সভা নিবাসে (দেওয়ানি আম ) যেখানে সাধারণ লোকেদের সাথে সভা করতেন মহারাজা। কিন্তু শুধুমাত্র বিশ্বস্ত লোকেদের সাথে বৈঠক করতেন সর্বোত ভদ্রে (দেওয়ানি খাস); এই হলগুলি দেখার মত; প্রীতম নিবাস চকেও ছিল তখনকার সভাঘর, আর সেখান থেকে এগোলেই পড়বে ঋদ্ধি সিদ্ধি পোল, সিদ্ধিদাতার মন্দির আছে সেখানে, যেখানে সাধারণ মানুষ এসে পূজা দিতে পারতেন মন্দিরে। এছাড়াও পিকক গেটের কাছে ময়ূর এসে বসত , এখানে রয়েছে একটি বিষ্ণু মন্দির।
চন্দ্র মহল হল সিটি প্যালেসের সবচেয়ে পুরোন প্রাসাদ। সাততল বিশিষ্ট এই প্রাসাদে এক এক করে দেখে নিন সুখ নিবাস, রং মহল, ছবি নিবাস, শ্রী নিবাস ও সবচেয়ে ওপরের তলে মুকুট মন্দির। বৈভবে এই প্রাসাদের প্রতিটি অংশই তাক লাগিয়ে দেয়; সিটি প্যালেসে রয়েছে মুবারক হল নামে আর একটি সভা ঘর, ও একটি ক্লক টাওয়ার।
১৭৯৯ সালে মহারাজা সোয়াই জয় সিংহের পৌত্র জয়পুরের হাওয়া মহল যেন এখানকার আইকন হয়ে উঠেছে। অবস্থান সিটি প্যালেসের এক প্রান্তে, লাল ও গোলাপি স্যান্ড স্টোন নির্মিত এই প্রাসাদটি আসলে রানীদের মহল; একে শিস মহলও বলা হয়; মহারাজা সোয়াই প্রতাপ সিংহ এই হাওয়া মহল নির্মাণ করেছিলেন। গোটা মহলটি মোট পাঁচতল বিশিষ্ট। একেবারে ওপরের তলাতেও যেতে দেওয়া হয়; হাওয়া মহলের ভিতরের দিকটায় রয়েছে ইতিহাস আর যেকোনো একটি অলিন্দ থেকে বাইরে তাকালেই ব্যস্ত ঘিঞ্জি জয়পুর শহরের বাস্তব জগৎ;
হাওয়া মহল বা সিটি প্যালেসের কাছেই আছে জন্তর মন্তর, অবশ্য দ্রষ্টব্যঃ। জন্তর মন্তর হল অত্যাধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের অসামমান্য এক নিদর্শন। এটি ছিল মহারাজা সোয়াই জয় সিংহের নিজস্ব আবিস্কার। তখনকার দিনে এই স্থাপত্য দিয়ে সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, জোয়ার ভাঁটা, সূর্য গ্রহণ, চন্দ্র গ্রহণ, কোন গ্রহের অবস্থান কোথায়, কোন উপগ্রহ বা রাশির অবস্থান কোথায় তা পরিষ্কার বোঝা যেত, অর্থাৎ জ্যোতির্বিজ্ঞানের পাশাপাশি এই স্থাপত্য থেকে জ্যোতিষ বিদ্যার কাজ করা যেত, সূর্য ঘড়ির মাধ্যমে প্রতি আধ সেকেন্ডের হিসাব পর্যন্ত করা যেত; আর এই জন্তর মন্তরএর আবিস্কারক হিসেবে গোটা দুনিয়ার কুর্নিশ প্রাপ্য মহারাজা জয় সিংহের। আমাদের দেশে তাঁর নক্সাতেই নির্মিত মোট পাঁচটি জন্তর মন্তর রয়েছে, জয়পুর ছাড়াও রয়েছে দিল্লী, বারানসি, মথুরা ও উজ্জয়নীতে।(চলবে)
No comments:
Post a Comment