Ads Top

উইকএন্ড : পালামৌ (বেতলা)

 উইকএন্ড
পালামৌ ফোর্ট 

অন্যরুট, ২০/১২/২০১৯,  উইকএন্ড  : পালামৌ (বেতলা)  :   ভারতে বাঘেদের প্রকৃত বিচরণভূমি রয়েছে মোট ৯টি তার মধ্যে একটি হল পালামৌ বা বেতলা ফরেস্ট। বাঘেদের অবাধ বিচরণভূমি থেকে অবাধে একটি সুন্দর সপ্তাহান্তিক ভ্রমন আপনার কর্মজীবনের সব ক্লান্তি নিমেষে মুছিয়ে দিতে পারে। কলকাতা থেকে পালামৌয়ের দূরত্ব প্রায় ৫৭০ কিলোমিটার। পালামৌ যাওয়ার জন্যে কলকাতা থেকে সরাসরি কোনো ট্রেন নেই, হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেনে করে প্রথমে যেতে হবে ধানবাদে। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে যাওয়াই  সবচেয়ে সুবিধা পর্যটকদের জন্যে। 
বেতলা অরণ্য 

পালামৌতে গিয়ে পৌঁছানোর আগে জানিয়ে দিই হাওড়া স্টেশন থেকে কি কি ট্রেন ধানবাদে পৌঁছায় - কলকাতা থেকে/ হাওড়া / শিয়ালদহ থেকে রাজধানী এক্সপ্রেস, সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেস, জম্মু তাওয়াই  এক্সপ্রেস ট্রেনগুলি ধানবাদ স্টেশন হয়ে যায়; ধানবাদে পৌঁছে একটি গাড়ি ভাড়া করে চলে যান পালামৌতে। ধানবাদ থেকে পালামৌয়ের দূরত্ব প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। ধানবাদ থেকে বাস ছাড়ে নিয়মিত, সময় লাগে প্রায় ৬ ঘণ্টা। 
ফোর্টের ওপর থেকে 


আর এক ভাবে পৌঁছানো যায় বেতলা না পালামৌতে। যেহেতু বেতলা বা পালামৌ একই জায়গা তাই এবার থেকে শুধু বেতলা নামটাই  ব্যবহার করব; কলকাতা থেকে ট্রেনে আপনি চলে যেতে পারেন রাঁচি। সেখানে একদিন থেকে আশেপাশের বিখ্যাত সাইট সিয়িংগুলো করে নিতে পারেন। রাঁচি থেকে ট্রেন বা বাস ধরে চলে আসুন ডাল্টনগঞ্জে। কমবেশি ১৭০ কিলোমিটার পথ, সময় নেয় ঘণ্টা চারেক। ট্রেনে আসলে ডাল্টনগঞ্জে নামাবে মাঝরাত্রে, প্রায় ৩টের সময়, স্টেশনেই একটু সময় কাটিয়ে ভোর হলেই বেরিয়ে চলে আসুন পুলিশ ফাঁড়ির কাছে অটো স্ট্যান্ডে (হেঁটে ২ মিনিট)। এখান  থেকে অটো  পেয়ে যাবেন, রিজার্ভ করলে অনেক বেশি নিয়ে নিতে পারে (প্রায় ৩০০ - ৩৫০ টাকা) শেয়ারে চলে যান অনেক কম ভাড়া পড়বে  (২৫-৩০ টাকার মতন); ঘণ্টা খানেকের মধ্যে পৌঁছে যাবেন বেতলা ফরেস্টের গেটের কাছে। কাছাকাছিই রয়েছে কয়েকটি হোটেল। সরকারি বাংলোটির নাম বন বিহার। সবচেয়ে বিশ্বস্ত। বন বিহারে আগে থেকে বুকিং করে রাখাই ভাল, কেননা আগে থেকে বলা থাকলে বন্ বিহার ডাল্টনগঞ্জে গাড়ি পাঠিয়ে তুলে নিয়ে আসে; বন বিহারের খাওয়া দেওয়ার ব্যবস্থাও ভাল, যেমন বলবেন, তেমন ভাবেই বাজার করে নিয়ে এসে রান্না করে দেয়  অতিথিদের জন্যে।
ফোর্টের একটি অলিন্দ থেকে 

এই অঞ্চলে বেড়াতে যাওয়ার গন্তব্য মোট ৩টি  ১) পালামৌ রিজার্ভ, ২) ফোর্ট এবং ৩) কেচকি; বেতলার এই জায়গাগুলিতে বেড়ানোর জন্যে আলাদাভাবে গাড়ির প্যাকেজ পাওয়া যায়, সেই বিবরণে পরে আসছি। পালামৌ  অরণ্যের মধ্যেই রয়েছে এক জোড়া দুর্গ। এগুলি চেরো  রাজারা তৈরী করেছিলেন। ১৬৫৮ থেকে ১৬৭৪ সালের মধ্যেই পালামৌতে রাজত্ব করতেন মেদিনী রায়, তাঁর আমলেই এখানে দূর্গ তৈরী করেছিলেন চেরো রাজারা, চেরো রাজাদের রাজত্ব ছড়িয়েছিল দক্ষিণে গয়া  ও হাজারীবাগ পর্যন্ত।  চেরো রাজারা  একটা সময় দোর্দণ্ড প্রতাপ ছিলেন  এই এলাকায়। মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাদের সাথেও যুদ্ধ করেছিলেন তাঁরা। দুর্গের ইতিহাস অবশ্যই শুনে নিতে হবে স্থানীয় গাইডের কাছে। তবে এখানে পিতা  ও পুত্র, চেরোদের দুই রাজা তৈরী করেছিলেন দুটি দূর্গ, একটি পাহাড়ের ওপরে আর একটি একটু নিচে। দুর্গের নিচ পর্যন্ত গাড়ি যায়, এরপর ওপরে উঠতে গেলে হেঁটে উঠতে হবে , কোনো সিঁড়ি নেই; তবে ওপর থেকে চারপাশের অরণ্যের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি না করে থাকা যায় না.;
কেচকি যাওয়ার পথে 

দুর্গের বিপরীত দিকে রয়েছে কেচকি। দুর্গ থেকে  কেচকি পৌঁছাতে মাত্র ২০ মিনিট সময় লাগবে। কেচকি হচ্ছে অচেনা  নদির ধারে অরণ্যাবৃত ছোট্ট একটি জায়গা, যেখানে সত্যজিৎ রায় 'অরণ্যের দিনরাত্রি' ছবিটির শ্যুটিং করেছিলেন। শীতকালে পাশের নদীতে জল প্রায় থাকে না বললেই চলে; তবু চারপাশের প্রকৃতি যেন মনকে নিয়ে চলে যায় কল্পলোকে। 
বাইসন যুগল 

বেতলা ফরেস্টের ভিতরে বেশ কিছু গ্রাম রয়েছে, যে গ্রামে লোকসংখ্যা খুবই কম, আর বাসিন্দারা বহু বছর ধরে কোলাহল বিহীন আরণ্যক সংসারের  মাঝে সেইসব গ্রামে বাস করে আসছেন। এরপর গাড়ি আপনাকে নিয়ে যাবে অরণ্যের গভীরে। দেড় ঘণ্টার অরণ্য সফর; তবে  এই সফরে এই ঘন অরণ্য পথে চলার জন্যে একজন অভিজ্ঞ গাইড আপনাকে সাথে নিতেই হবে; অরণ্যের মধ্যে হরিণ, বাইসন, ময়ূর দেখতে পাওয়া যায় যখন তখন, ভাগ্যে থাকলে হাতির দলও দেখতে পারেন, প্রচুর প্রজাতির পাখি আছে এই অরণ্যে, তবে বাঘের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে বেতলায়। তবুও সরকারিভাবে একে  বাঘদের অবাধ বিচরণভূমি বলা হয়; 

বেতলার সৌন্দর্য 

আপনি ইচ্ছে করলে একাধিবার অরণ্যে সাফারি বুক করতে পারেন এবং একাধিকবার ঘুরে আসতে পারেন। প্রতিবার ৩০০ টাকা করে জনপ্রতি  হিসেবে খরচ পড়ে, ফোর্ট, কেচকি ও সাফারি মিলিয়ে ১০০০ টাকা নিতে পারে গাড়িতে। এছাড়া অরণ্যে প্রবেশমূল্য ১০০ টাকা  (গাড়ি প্রতি), ক্যামেরা চার্জ ১০০ টাকা (স্টিল ক্যামেরা) আলাদা করে দিতে হয়;
পালামৌ অরণ্যপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয়, কারন তার আদিম সৌন্দর্যের জন্যে। ডাল্টনগঞ্জে ফেরার জন্যে বন বিহারের সামনে থেকেই সকাল ৭টার  সময় বাস পেয়ে যাবেন (ভাড়া ২০ টাকা) , অথবা সামান্য ভাড়ায় বন বিহার গাড়িতে পৌঁছে দেবে ডাল্টন গঞ্জে। মাত্র দুই বা তিন রাত্রির জন্যে ঘুরে আসুন রাঁচি হয়ে পালামৌতে। মন  ভাল হয়ে যাবে।
কেচকির নদী 

বন বিহার - 9102403882, (ঝাড়খন্ড ট্যুরিস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের অধীনে - vanviharjtdc@gmail.com) এছাড়াও রয়েছে নেচার হাট রিসর্ট - ৯১৫২৬৪৯৬৪১, হোটেল ড্রিমল্যান্ড - ৯১৫২৮২৭৩৩৯, হোটেল দেবযানী - ৯৬০৮১৪৩০৬৩, গ্রিন ভিউ রেসিডেন্সি - ৮৭৮৯৯৬৫৫৩১।

No comments:

Aaj Khabor. Powered by Blogger.