Ads Top

দার্জিলিং পর্ব - ৩

দেশের ভ্রমন
কুয়াশা করেছে ঘেরাও, জোড়পোখরি 

অন্যরুট, ০৫/১২/২০১৯, দার্জিলিং পর্ব  - ৩ :  দার্জিলিং পাহাড়ে বেড়াতে এসে গত পর্বে আমরা আলোচনা করেছিলাম লেপচা  জগৎ নিয়ে। আজ আমরা বেড়াবো লেপচা  জগৎ থেকে একটু এগিয়ে জোর পোখরি, সুখিয়া পোখরি এলাকায়।  
শীতকালে বরফ পারে সুখিয়া পোখরির রাস্তায় 

লেপচা জগৎ থেকে  সুখিয়া পোখরির দূরত্ব হল প্রায় ৪ কিলোমিটার, গাড়িতে যেতে সময় লাগবে ১০ মিনিট মত;  ঘুম থেকে দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। সুখিয়া পোখরিতে সাইট সিয়িং বলে কিছু নেই, তবে প্রকৃতির কোলে বসে প্রকৃতির সব রূপ সৌন্দর্যকে এক নি:শ্বাসে চেটেপুটে উপভোগ করে  নিতে গেলে একরাত্রি থেকে যান সুখিয়া পোখরিতে।
স্বপার্ষদ কাঞ্চনজঙ্ঘা 

 উইক এন্ড ট্রিপের আদর্শ জায়গা এই সুখিয়া পোখরি। সপ্তাহান্তের দুটি দিন অনাবিল আনন্দে কাটবে এটুকু গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়; সুখিয়া পোখরি থেকে একটি রাস্তা চলে গিয়েছে মানেভঞ্জনের দিকে, যেখান থেকে শুরু হয় সান্দাকফু - ফালুট যাওয়ার ট্রেক রুট ও জিপ রাস্তা। অন্য পথটি নেপাল রাষ্ট্রের সীমান্ত বরাবর নেমে গিয়েছে মিরিকে।

সুখিয়া পোখরিতে রয়েছে বন্ দপ্তরের তুলনাহীন সুন্দর একটি রিসর্ট, যে রিসার্টকে স্বর্গরাজ্য বলে  ভুল হতেই পারে। এই রিসর্টের নাম 'গুরাসে ফরেস্ট রিসর্ট'।গুরাস হল রডোডেন্ড্রনের স্থানীয় নাম; রিসর্টের  অবস্থান খুব সুন্দর জায়গায়, রিসর্টের প্রায় সব জায়গা থেকেই দর্শন করা যায় কাঞ্চনঞ্জঙ্ঘাকে।আবহাওয়া ভাল থাকলে দিগন্তে দেখা মিলবে মাউন্ট এভারেস্ট, লৎসে, মাকালু, কুম্ভকর্ণ, জমোলহরি  ছাড়াও অন্যান্য শৃঙ্গের। সে এক অসামান্য অভিজ্ঞতা এবং নগর জীবনের ক্লান্তি লাঘবের সুন্দর এক উপায় । (বুকিং -  03324862313/9830372948 কলকাতা অফিস) রিসর্টের একদিক দিয়ে বেরিয়ে গেলে সামান্য এগোলেই এমন একটি জায়গায় পৌঁছে যাওয়া যায়, যেখান থেকে অনেক নিচে দেখতে পাওয়া যাবে রঙ্গীত নদীকে ।

সুখিয়াপোখরি থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার গেলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে জোরপোখরিতে। দার্জিলিং থেকে জোড়পোখরির দূরত্ব ১৯ কিলোমিটার আর শিলিগুড়ি থেকে জোরপোখরির দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিলোমিটার। শিলিগুড়ি থেকে একটি গাড়ি ভাড়া করে অনায়াসে পৌঁছে যাওয়া যায় এখানে। জোর মানে হল জোড়া, আর পোখরি মানে হল পুকুর। এই জায়গাটির উচ্চতা হল ৭৪০০ ফুট; জোরপোখরি থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য দেখার সাধ পরিপূর্ণভাবে মিটিয়ে নেওয়া যায়; জোর পোখরিতে রয়েছে জোড়া পুকুর, তার চারপাশ খুব সুন্দর করে বাঁধানো রয়েছে, তৈরী হয়েছে সুন্দর উদ্যান। পুকুরের জলে সাঁতার কেটে বেড়ায় রাজ হাঁসের দল; আর একটি জিনিস এখানে আছে, যা বিশ্বের খুব কম জায়গাতেই আছে; এখানে দেখতে পাওয়া যাবে হিমালয়ান সালামানডার ।  এটি হল উভচর গোত্রীয় একটি প্রাণী, যে প্রাণী প্রাগঐতিহাসিক যুগ  বা ডায়নোসরের আমল থেকেই জীবিত রয়েছে এখনো পর্যন্ত। গোটা বিশ্বে অতি  বিরল এই প্রাণী। নানারকম রঙের হয়, অনেকটা গিরগিটির মত দেখতে। 
গুরাসে ফরেস্ট রিসর্টের ছাদ থেকে

কুয়াশা ঘেরা জোড়পোখরিতে এক বা দুই রাত্রি খুব ভাল লাগবে। এখানে রাত্রিবাসের জন্যে রয়েছে, GTA Tourist Lodge মোট ১৮টি ঘর রয়েছে, যার মধ্যে ৬টি ঘর হল ভিউ ফেসিং, অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল এই রিসর্টের বুকিং হয় জিটিএ অফিস থেকে। দার্জিলিঙের নম্বর - (0354) 2254879 / 2255351, শিলিগুড়ির নম্বর - 9434007080 এবং কলকাতার বিধান নগরের গোর্খা ভবনের নম্বর -  033 - 23377534 / 99031 74047.
মানে রাখতে হবে, আগে দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল থাকার সময় ৪নম্বর সেক্সপিয়ার সারণির অফিস থেকে দার্জিলিঙের রিসর্টগুলির বুকিং করা যেত , কিন্তু এখন আর যায় না, এখন কলকাতার বিধান নগরে গোর্খা ভবন থেকেই বুকিং দেওয়া হয়; আর একটি বাজেট রিসর্ট রয়েছে এখানে, যার নাম হল জোড়পোখরি সালামান্দার রিসর্ট, এটিও খুব সুন্দর একটি রিসর্ট, বুকিং 033 25299689 (কলকাতা), অথবা লগ ইন করুন - www.heritahebungalows.com  
জোড়পোখরিতে হংস বলাকা 

জোর পোখরি থেকে নেপাল সীমান্ত খুবই কাছে, এখন থেকে নেপাল সীমান্তের গায়েই সীমানা গ্রাম ও পশুপতি বর্ডার মার্কেট ঘুরে হিমালয়ের সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে পৌঁছে যাওয়া যায় মিরিক পর্যটনকেন্দ্রে। সেটির আলোচনা করব আগামী পর্বে। (চলবে)


No comments:

Aaj Khabor. Powered by Blogger.