রাজস্থান পর্ব - ১
![]() |
সওয়ারীর খোঁজে |
অন্য রুট, ০৩/১২/২০১৯ , রাজস্থান পর্ব - ১ : শীতকালে রাজস্থান বেড়াতে যাওয়ার আনন্দই আলাদা। গোটা রাজস্থান জুড়েই জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়ে শীতের মরসুমে। বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে, ইতিহাসের পাতাগুলোকে সযত্নে উল্টে পাল্টে দেখে নেওয়ার বিষয়টি । বছরের অন্য্ সময়ে রাজস্থানের পশ্চিম দিক ঘেঁষে থাকা থর মরুভূমির উত্তাপ থাকে অনেক বেশি, তাই শীতকালের মরসুম হল রাজস্থান ভ্রমণের সেরা সময়;
![]() |
লোকনৃত্য ও গানের উৎসব |
রাজস্থান হল রাজা রাজড়াদের জায়গা। এখানকার রাজাদের রানা বলে সম্বোধন করা হত , তবুও এই রাজ্যের নাম রানাস্থান না হয়ে রাজস্থানই রয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে রাজবাড়ী, কেল্লা, হাভেলি, স্মৃতি স্তম্ভ । যেগুলির প্রত্যেকটিকে নিয়ে রয়েছে আলাদা আলাদা ইতিহাস।
রাজস্থানের রাজধানী হল জয়পুর। ব্রিটিশ আমলে এই রাজ্যের নাম ছিল রাজপুতানা , রাজপুতদের আবাসস্থল হিসাবে বলা হতো রাজপুতানা। ১৯৪৯ সালে ৩০ শে মার্চ এই অঞ্চলের সমস্ত শাসকের রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে রাজস্থান নামকরণ করে স্বাধীন ভারতের সাথে অন্তর্ভুক্তি হয়। রাজস্থানের উত্তর দিকে রয়েছে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্য। পূর্ব দিকে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ , দক্ষিণ পূর্বে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমে রয়েছে গুজরাট রাজ্য।
![]() |
সারাদিনের পানীয় জল সংগ্রহ |
রাজস্থানের দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে উত্তর পূর্ব দিক পর্যন্ত প্রায় ৮৫০ কিলোমিটার অঞ্চলে বিস্তৃত রয়েছে আরাবল্লী পর্বত শ্রেণী, যার মধ্যে দক্ষিণ পশ্চিম অংশে রয়েছে মাউন্ট আবু শৃঙ্গটি এবং রাজ্যের পশ্চিম দিক জুড়ে রয়েছে থর মরুভূমি। এই থর মরুভূমি অতিক্রম করলেই রয়েছে পাকিস্থানের সীমান্ত ,অর্থাৎ রাজস্থানের পশ্চিম দিক জুড়ে রয়েছে ভারত পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক সীমানা। থর মরুভূমি দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে লুনি নদী।
![]() |
মরুভূমির মাঝে রাজস্থানি নাচ |
শীতকালের মরসুমে রাজস্থানে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে যার ফলে পর্যটন শিল্প হলো রাজস্থান সরকারের অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস। যেহেতু রাজ্যের রাজধানী হলো জয়পুর, তাই জয়পুর দিয়েই আমরা সফর শুরু করবো।
![]() |
এমন স্থাপত্য রয়েছে গোটা রাজস্থান জুড়েই |
কি ভাবে যাবেন : রাজ্যের প্রায় সব বড় শহরের সাথে সড়ক পথে, রেল পথে এবং আকাশ পথে যুক্ত রয়েছে গোলাপি শহর জয়পুর। কলকাতা থেকে রাজস্থান ভ্রমনের জন্যে সব থেকে ভালো ট্রেন হলো যোধপুর এক্সপ্রেস যা হাওড়া স্টেশন থেকে ছেড়ে যোধপুর পৌঁছায় , ওই রেলপথেই পড়বে জয়পুর স্টেশন। অন্যান্য এক্সপ্রেসের টাইম টেবিলও বেশ ভালো।
![]() |
গোলাপি শহর জয়পুর |
- কলকাতা ষ্টেশন থেকে প্রতাপ এক্সপ্রেস ছাড়ে রাত্রি ১০টা ৪৫ মিনিটে, জয়পুর পৌঁছায় পরের দিন রাত্রি ১১টা ১০ মিনিটে।
- শিয়ালদহ - আজমের এক্সপ্রেস শিয়ালদহ ষ্টেশন থেকে ছাড়ে রাত্রি ১১টা ৫ মিনিটে, জয়পুর পৌঁছায় পরেরদিন রাত্রি ১১টা ৫০ মিনিটে।
- যোধপুর এক্সপ্রেস হাওড়া ষ্টেশন থেকে রাত্রি ১১টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে পরের দিন জয়পুর পৌঁছায় রাত্রি ১২টা ৩৫ মিনিটে।
- কলকাতা - যোধপুর স্পেশ্যাল কলকাতা ষ্টেশন থেকে সন্ধ্যে ৬টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে জুপুর পৌঁছায় পরদিন রাত্রি ৯টা ১৫ মিনিটে।
- হাওড়া - যোধপুর স্পেশ্যাল হাওড়া ছেড়ে যায় রাত্রি ৮টা ১৫ মিনিটে, কনকপুর পৌঁছায় পরদিন রাত্রি ১১টা ৩১ মিনিটে।
- অনন্যা এক্সপ্রেস শিয়ালদহ থেকে ছাড়ে দুপুর ১টা ১০ মিনিটে, জয়পুর পৌঁছায় পরদিন বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে।
![]() |
পর্যটক নিয়ে চলেছেন গজরাজ (* অন্যরুট পশু শ্রমের সমর্থক নয়) |
দিল্লী ঘুরেও জয়পুর পৌঁছানো যায়. দিলে থেকে জয়পুরের সড়কপথে দূরত্ব প্রায় ২৬৮ কিলোমিটার, গাড়িতে যেতে সময় লাগে প্রায় ৫ ঘণ্টা। এছাড়াও কলকাতা দমদম বিমান বন্দর থেকে জয়পুরে আকাশপথেই অনায়াসে যাওয়া যায়;
দিলে, আগ্রা ও জয়পুর এই তিন জায়গাকে নিয়ে পর্যটনের পরিভাষায় গড়ে উঠেছে 'গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল'। দিল্লী বেড়াতে গিয়ে অনেকেই এই স্বর্ণ-ত্রিভুজ ভ্রমণ করে থাকেন।
জয়পুর শহরে দর্শনীয় স্থান রয়েছে অনেক, সেগুলির সব কয়টি দেখতে হলে প্রায় দিন ১০ সময় লেগে যেতে পারে , কিন্তু সাধারণ পর্যটকের হাতে সময় খুবই সীমিত আর সেই কারণেই জয়পুরের প্রধান দ্রষ্টব্যগুলি দিন দুয়েকের মধ্যে দর্শন করে রাজস্থানের অন্য গন্তব্যগুলির দিকে এগিয়ে যাওয়াই সমীচীন হবে। তাই আমরা দেখবো জয়পুরের অম্বর প্যালেস , হাওয়ামহল , সিটি প্যালেস , যন্তর মন্তর ,জলমহল , নাহারগড় ফোর্ট , বিড়লা মন্দির , শিস মহল , মান সাগর লেক , সিসোদিয়া রানীবাগ ইত্যাদি। বাকি দ্রষ্টব্যগুলির বিবরণ আমরা সংক্ষেপে আলোচনা করব। (চলবে )
No comments:
Post a Comment