Ads Top

উইক এন্ড, সামসে, ভুটান

উইক এন্ড

অন্যরুট, ২৪/১২/২০১৯, উইক এন্ড, সামসে, ভুটান : উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স যথেষ্ট জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। কিন্তু ডুয়ার্সের প্রধান পর্যটনকেন্দ্রাগুলোকেই ভ্রমণপ্রিয় মানুষেরা আঁকড়ে থাকতে চান, অথচ ডুয়ার্সের আশেপাশেও এমন বেশ কিছু জায়গা রয়েছে, যেগুলি খুব ভাল লাগবে অল্প দিনের জন্যে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের। ডুয়ার্স বেড়াতে গিয়ে হোক বা আলাদা ভাবে উইকএন্ডের ছুটি কাটাতেই হোক, গন্তব্য হিসেবে বেছে নিতে পারেন ভারত-ভুটান সীমান্তে থাকা সামসে জায়গাটিকে। 

সামসে হল ভুটানের একটি জেলা আর বেড়াতে যাওয়ার গন্তব্যটি  হল সামসে শহর, বেশ ছোট্ট একটি শহর; ভারতীয়রা এই শহরটিকে সামচি  বলে ডাকেন, সীমান্তের এপারে রয়েছে চামুর্চি চা বাগান আর ওপারে রয়েছে সামসে। ডুয়ার্সের বৈঠক খানা চালসা  থেকে যে রাস্তাটি আসামের দিকে চলে গিয়েছে, সেই রাস্তা  ধরে একটু এগোলেই ডায়না নদী পার করে রয়েছে বানারহাট, এই অল্প ব্যস্ত বানারহাট থেকে চা বাগানের মধ্যে দিয়েই পথ চলে গেছে ভুটান বর্ডারের দিকে। চামুর্চি চা বাগানের শোভা দেখতে দেখতেই পৌঁছে যাওয়া যাবে সীমান্তে। 


সামসে জায়গাটি শহর হলেও বেশ নিরিবিলি। পাহাড়ের সামান্য উচ্চতায় রয়েছে একটা বাটির মতন অবস্থানে, পর্যটনের প্রচারের কোনো আলো এখানে পড়ে  না, ফলে প্রায় পর্যটকশূন্য হয়ে থাকে সারা বছর; তাই শীতের মরসুমে বেড়াতে যাওয়া মানুষের ভিড় এড়াতে সামসে ভ্রমন হয়ে উঠতে পারে যথেষ্ট আকর্ষক। কেননা এখানে বেশ কিছু দ্রষ্টব্যঃ রয়েছে, যা খুব ভাল লাগবে পর্যটকদের। 


সামসে বেড়াতে গিয়ে প্রথমেই দেখা উচিত হবে শিবালয় শিব মন্দিরটি। রাজস্থান থেকে আনা স্যান্ড স্টোন  দিয়ে বানানো হয়েছিল ভুটানের একমাত্র এই  শিব মন্দিরটি। ভুটানের এই অঞ্চলের হিন্দুরা এই মন্দিরটিকে রীতিমত তীর্থ বলে মনে করেন, সীমান্ত  পেরিয়ে ওপারে গিয়ে পুজো দিয়ে আসেন ভারতীয়রাও।


এখানে রয়েছে ডায়না সাসপেনশন ব্রিজ। ভুটানের পুনাখাতেও রয়েছে ১৬০ মিটার লম্বা এরকম একটা ঝুলন্ত সেতু, কিন্তু সামসের এই ডায়না সাসপেনশন ব্রিজটি তার চেয়েও লম্বা একটা ঝুলন্ত সেতু, এতটাই লম্বা যে, ছবি তুলতে গেলে যেন ক্যামেরার একটা ফ্রেমে আঁটে  না, লোহা আর কাঠের পাটা  দিয়ে বানানো হয়েছে এই সেতু। এর ওপর দিয়ে গাড়ি নিয়ে গেলে কড়মড় শব্দে রীতিমত ভয় লেগে যাওয়ার জোগাড় হয়, এই জায়গাটির চারপাশের প্রাকৃতিক শোভাও  বেশ সুন্দর। 


সামসে শিবালয় শিব মন্দিরের ওপরে পাহাড়ের উচ্চতায় গড়ে উঠেছে খোরলো চোর্তেন বৌদ্ধ মন্দির। ২০১৫ সালে ভুটানের রাজার জন্ম বার্ষিকীতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বানিয়ে দিয়েছিলেন এই বৌদ্ধ মন্দিরটি।  পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এত সুন্দর যে এই এলাকায় আশেপাশের  জায়গা গুলো দেখবেন, মনে হবে যেখানে খুশি পিকনিক করতে বসে যাই।  



সামসে থেকেই গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে নেওয়া যেতে পারে তেণ্ডু থেকে, খুব বেশি দূরে নয়, পাহাড়ের একটু ওপরের দিকে, যেখান থেকে ভারতের বিস্তীর্ণ সমতলভূমি দেখতে পাওয়া যায়, নদীগুলিকেও  দেখতে পাওয়া যায়; তেণ্ডু  বেড়াতে গেলে জলপ্রপাত দেখতে পাওয়া যাবে, আর সেখানে রয়েছে তেণ্ডু কমিউনিটি টেম্পল, ছোট একটি বৌদ্ধ মন্দির, তবে পাহাড়ের ওপরে এই মন্দির থেকে ছবি তোলার লোভ সামলানো যায় না; ভারত ভুটান সীমান্তের কাছেই সামসের মতন আর একটি শহর রয়েছে, যেটি সামসে থেকে যাওয়া যাবে আবার ডুয়ার্সের বীরপাড়া থেকেও যাওয়া যাবে, সেই শহরটির নাম হল গোমতু। এই জায়গাটি ভুটানের একটি বাণিজ্যিক শহর, রয়েছে একটি সিমেন্ট কারখানা, আর রয়েছে একটি মনাস্ট্রি, এখানে প্রেয়ার হুইল দেখতে পাওয়া যাবে। 

সামসে জায়গাটির আশেপাশেই রয়েছে অরণ্য, এই অঞ্চলে নানান প্রজাতির পাখি দেখতে পাওয়া যায়; সামসে অঞ্চলে ড্রুকপা ,  দোয়াপ ও লৎসাম্পা আদিবাসীদের বাস; এদের হস্তশিল্প বেশ ভাল, কাছাকাছি রামতো  নামে একটি আদিবাসী গ্রামকে হস্তশিল্পের গ্রাম বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমনিতে ভারত থেকে গিয়ে একবার ঘুরে দেখে চলে আসতে  সেভাবে কোনো পারমিট লাগবে না ভুটানের সামসে বেড়াতে গেলে। তবে সেখানে রাত্রিবাস করতে হলে পারমিট দরকার পড়তে পারে, আর সেটা পাওয়া যাবে ফুন্টশোলিং থেকে। সামসে গেট থেকেও অনুমতি দেওয়া হয়; রাত্রিবাসের জন্যে সাধারণ মানের বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে সামসের বাস স্ট্যান্ড এলাকায়। ছোট ছুটিতে এই বিদেশ ভ্রমন যে  কোনো প্রকৃতি প্রেমিক মানুষের জন্যে চিত্তাকর্ষক হয়ে উঠতে পারে।

No comments:

Aaj Khabor. Powered by Blogger.