শ্রীলঙ্কা পর্ব ২
অন্যরুট, ১৯/১২/২০১৯ : শ্রীলঙ্কা পর্ব ২ : শ্রীলঙ্কার রাজধানী হল কলম্বো। সমুদ্রের ধারে সুন্দর সাজানো গোছানো শহর, দেশের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্রও বটে। ২০০০ বছর আগেও কলম্বো ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয় সমুদ্র বন্দর, ভারত, গ্রিস, পারস্য, ইতালি, আরব, চীনের মত অন্যান্য দেশ থেকে বাণিজ্যিক তরী এসে ভিড়ত কলম্বোতে। ১৮১৫ সালে ব্রিটিশ শাসন শুরুর সময় থেকেই কলম্বো শ্রীলঙ্কার রাজধানী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে, ১৯৪৮ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শ্রীলঙ্কাই দেশের রাজধানী হিসেবে থেকে যায়; তার আগে রাজধানীর মর্যাদা দেওয়া হাত গ্রেটার কলম্বোতে অবস্থিত জয়বর্ধনেপুরা কোটে জায়গাটিকে, ১৯৭৮ সালের পর জয়বর্ধনেপুরা কোটে থেকে প্রশাসনিক কাজকর্ম সরিয়ে আনা হয়েছিল কলম্বোতে। ইব্ন বতুতা ১৪ শতকে এখানে এসেছিলেন আর এই শহরকে কলমপু নামে চিনেছিলেন।
কলম্বো বিমান বন্দরে নেমে প্রথমেই হোটেলে চেক ইন করে নিতে হবে, এরপর কোনো ট্র্যাভেল এজেন্ট হোক বা হোটেল কর্তৃপক্ষের ট্র্যাভেল ডেস্ক থেকে সাইট সিয়িংয়ের জন্যে গাড়ি বুক করে নিতে হবে; তারপর এক এক করে দেখে নিতে হবে প্রধান প্রধান দর্শনীয় জায়গা গুলি।
প্রথমেই চলুন শ্রীলঙ্কা প্ল্যানেটোরিয়াম দেখতে, ভিতরে রয়েছে মোট ৫৭০টি আসন, রয়েছে ৪ডি প্রজেক্টর, ভিতরে বসে একটি শো দেখলে মানে হবে আপনি সত্যিই চলে গিয়েছেন মহাকাশে। ভারতীয় মুদ্রায় টিকিটের দাম লাগে ৪০ টাকা, শিশুদের ১০ টাকা করে; পরের গন্তব্য পন্নামবালা কনেশ্বরম কভিল, মন্দিরে প্রবেশ করার আগেই চোখে পড়বে সোনালী রঙের বিশাল শিব মূর্তি। ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারিতে রয়েছে প্রচুর ছবি এবং তথ্য, শ্রীলঙ্কার সংস্কৃতি জানতে পারবেন এখন থেকে। ক্রো আইল্যান্ড বিচ পার্ক জায়গাটি সমুদ্রের ধারে একটি সুসজ্জিত উদ্যান মাত্র। হাতে কম সময় নিয়ে শ্রীলঙ্কায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্যে নয়, তবে সূর্যাস্ত ভাল লাগবে।
কলম্বোর অন্যতম প্রধান দ্রষ্টব্যগুলির একটি হল সম্বোধি চৈত্য, ৮০ মিটার উঁচু ১১ তল বিশিষ্ট এই বৌদ্ধ বিহারটিকে দেখতে রকেটের মতন, সমুদ্রের বহু দূর থেকেও এই চৈত্যটিকে দেখা যায়; ২৫৮টি সিঁড়ি ভেঙে একেবারে শীর্ষে পৌঁছানো যায়, ওপরে ৩১ টি ম্যুরাল ও ৪টি বুদ্ধমূর্তি রয়েছে। সুবিশাল বেইরা লেকের মাঝে ছোট্ট একটি দ্বীপ হল স্লেভ আইল্যান্ড, যা ডাচেরা ব্যবহার করত এবং ক্রীতদাসদের বন্দি করা হত এখানে। শোনা যায়, যাতে কোনো বন্দী পালতে না পারে তাই এই লেকের জলে ডাচেরা কুমির ছেড়ে রাখত।, এখন এটি সেনা ছাউনির অন্তর্গত। রয়েছে একটি বোটানিক্যাল গার্ডেনও। বেইরা লেকটিও খুব সুন্দর।
বন্যা ও প্রাকৃতিক জলোচ্ছাস থেকে ভূখণ্ডকে বাঁচাতে তৈরী হয়েছে বেদ্দগানা ওয়েটল্যান্ড পার্ক, উঁচু উঁচু ঘাসে ভর্তি জায়গা, তবে বেশ রোমান্টিক আবহ রয়েছে এখানে; বেলানুয়েলা রাজামহ বিহার্য তে রয়েছে বৌদ্ধমন্দির, আর এখানেই রয়েছে বোধি বৃক্ষ। কেলানিয়া রাজা মহা বিহার হল আর এক বৌদ্ধ মন্দির, যেখানে ভগবান বুদ্ধ একাধিকবার এসেছিলেন, এই মন্দির ভারতীয় ও পর্তুগিজ অনুপ্রবেশকারীদের হাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। শহরের কোলাহল ছাড়িয়ে নির্জনে রয়েছে আর এক বৌদ্ধ মন্দির, যার নাম শিমা মালাকা।
এখানকার ডাচ মিউজিয়ামটি অবশ্য দ্রষ্টব্যঃ, তৎকালীন ডাচ ব্যবসায়ীদের জীবন যাত্রা সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারা যায়; দেখে নিতে পারেন এখানকার সুবিশাল সেন্ট লুসিয়ার ক্যাথিড্রাল চার্চ, ভিতরে একসাথে প্রায় ৬০০০ মানুষ বসতে পারেন। শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার স্মারক হিসেবে রয়েছে ইন্ডিপেন্ডেন্স মেমোরিয়াল হল বা স্কোয়ার, পর্যটকের ভিড় থাকে এখানে। কলম্বোর অপূর্ব কারুকার্য মন্ডিত জামি উল আলফার মসজিদটি দেখলে মুগ্ধ হবেন, মসজিদের সর্বত্র রয়েছে লাল সাদা ডোরাকাটা রঙ, শুক্রবার মসজিদ দর্শনের জন্যে বন্ধ থাকে।
কলম্বো বেড়াতে এসে এখানকার ন্যাশনাল মিউজিয়ামটিও দেখে নেওয়া উচিত হবে; এখানকার গঙ্গা রামাইয়া বৌদ্ধ মন্দিরটিও বেশ সুন্দর, ভারতীয়, ঠাঁই ও চীন শৈলীতে গড়ে উঠেছে মন্দিরটি। কলম্বো বেড়াতে এসে সময় কাটানোর ভাল জায়গা গেল ফেস গার্ডেন, কাছেই রয়েছে একটি ওল্ড গেল বাক লাইট হাউস। এছাড়াও রয়েছে বহু পুরোনো ডাচ হাসপাতাল। অন্যান্য দেশের মত এখানেও রয়েছে চিড়িয়াখানা, আর্ট মিউজিয়াম ইত্যাদি। (চলবে)
No comments:
Post a Comment