দার্জিলিং - পর্ব ২ :
অন্য রুট. ০২/১২/২০১৯, দার্জিলিং - পর্ব ২ : দার্জিলিংকে কেন্দ্র করে বেড়ানোর জায়গা অনেক। আগের পর্বে আমরা আলোচনা করেছি দার্জিলিং যাওয়ার পথে কার্শিয়াং বা সিটংএ দুই রাত্রি কাটিয়ে দার্জিলিং ভ্রমণকে কি ভাবে আরও রোমান্টিক করে তোলা যায়, সেই সম্পর্কে। আজকের পর্বে আলোচনা করব দার্জিলিংকে কেন্দ্র করে আরও বেশ কিছু জায়গার ব্যাপারে।
দার্জিলিং পৌঁছনোর আট কিলোমিটার আগেই পড়বে ঘুম জায়গাটি। ঘুমের উচ্চতা দার্জিলিঙের থেকেও উঁচুতে। ঘুমে রাত্রিবাসের জন্যে এতদিন কোনো হোটেল বা হোম স্টে সেভাবে ছিল না, তবে এখন দুই একটি হোম স্টে তৈরী হয়েছে। আসলে ঘুম জায়গাটি একটি পাঁচ মাথার মোড়; ঘুম থেকে হিলকার্ট রোডের একটি রাস্তা গিয়েছে দার্জিলিং শহরের দিকে, একটি রাস্তা গিয়েছে শিলিগুড়ি শহরের দিকে, একটি রাস্তা গিয়ে তিন মাইল হয়ে তাকদার দিকে, আর একটি রাস্তা উর্দ্ধমুখে গিয়ে পৌঁছেছে টাইগার হিলে, আর পঞ্চম রাস্তাটি গিয়েছে সুখিয়াপোখরির দিকে, সান্দাকফু যেতে গেলে যে পথ ধরতে হয়; আজ আমরা সেই পথেই যাব;
ঘুম থেকে ধুপী বনের মধ্যে দিয়ে রাস্তাটি এঁকে বেঁকে চলে গিয়েছে সুখিয়াপোখরির দিকে। ঘুম ছেড়ে একটু এগোলেই দেখতে পাওয়া যাবে একটি হেলিপ্যাড। রাস্তার পোশাকি নাম হল ঋষি রোড , আর এই রাস্তাটি এতই সুন্দর, যে বেশিরভাগ অংশ থেকেই কাঞ্চনজংঘা দর্শন করা যায়; ঘুম থেকে সুখিয়াপোখরির দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার, মাঝে পড়বে লেপচা জগৎ; ঘুম থেকে এগোনোর পর হেলিপ্যাড ছাড়িয়ে কিছুদূর এগোলেই পথের পাশে দেখতে পাওয়া যাবে হার্ব গার্ডেন। বনৌষধির অরণ্য। সুনসান রাস্তা ধরে সগর্জনে এগিয়ে যাবে আপনার জিপ গাড়িটি। এবার যেখানে দেখবে পাইন বনের মাথায় মেঘ আটকে রয়েছে, পাইন বনের পায়ের কাছে অনেকটা জায়গা ফাঁকা মতন, জানবেন সেটাই হল চাটাইধুরা মাঠ; আর কাছাকাছি থাকা ছোট্ট জনপদটি হল চাটাইধুরা গ্রাম, নির্জন কোলাহল বিহীন দারিদ্রের মলিন ধুলো মাখা ছোট্ট একটা গ্রাম। এখানেই রয়েছে হাওয়াঘর ভিউ পয়েন্ট, যাত্রা বিরতিতে একটু হাওয়া খেলেই বুঝতে পারবেন, নামটা কতটা সার্থক, আর যে সব অপার্থিব সৌন্দর্য্য আপনার জন্যে অপেক্ষা করে থাকবে এই ভিউ পয়েন্টে তা যেন উপরি পাওনা।
চাটাইধুরা গ্রাম থেকে সামান্য এগোলেই পর্যটন মানচিত্রের আর এক অনাবিষ্কৃত অলিন্দ লেপচা জগৎ এসে নীরবে স্বাগত জানাবে। সহজ সরল লেপচা মানুষের অনেক প্রবীণ একটি গ্রাম, পর্যটন মানচিত্রেই যা নবীন হয়ে উঠেছে। লেপচা জগতের উচ্চতা ৬৯৫৬ ফুট; প্রায় দার্জিলিঙের মত উচ্চতা। লেপচা জগৎকে রহস্যের মোড়কে লুকিয়ে রেখেছে পাইন, ওক আর রডোডেনড্রন গাছের ঘন অরণ্য, কত যে জানা বা নাম না জানা পাখির দেখা মেলে তার ইয়াত্তা নেই এই জগতে। কাঞ্চনজঙ্ঘার পাঁচটি শৃঙ্গের উন্মুক্ত দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে আসবে দিনের বেলায় আর রাতের বেলায় প্রচন্ড শীতের কামড় দিয়ে নিকষ কালো অন্ধকার সবকিছুকে মুছিয়ে দেবে চোখের সামনে থেকে এই গ্রামে। তখন শুধুই অরণ্যের ঝিঁঝিঁ পোকার অর্কেস্ট্রা শুনতে শুনতে ফায়ার প্লেসের ধারে বসে দার্জিলিং চায়ের পেয়ালায় চুমুক দেওয়া আর আড্ডা দেওয়া ছাড়া অন্য্ কোনো কাজ খুঁজে পাওয়া যাবে না; তাই একটি রাত্রি লেপচা জগতে কাটাতে পারলে অন্যান্য অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকবেন নি:সন্দেহে।
লেপচা জগতে পরের দিন ঘুম থেকে উঠে পড়ুন সূর্যের ঘুম ভাঙ্গার আগেই আর গুটি গুটি পায়ে গিয়ে হাজির হোন দেড় কিলোমিটার দূরের ঘুম রক ভিউ পয়েন্টে। পাহাড়ি পথে হালকা ট্রেকিং আপনার শরীর গরম করে দেবে। সামান্য ক্লান্তি তবে প্রাপ্তি অনেকটা। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে হিমালয়ের কোলে রং পরিবর্তনের খেলা আর কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর রঙের প্রতিফলন দেখতে দেখতে যে কেউ বিভোর হয়ে উঠবেন। তবে যদি ফরেস্ট বাংলোতে থাকেন তবে হ্যাপা অনেক কম, কারন ফরেস্ট বাঙলোর ছাদ থেকেই সূর্যোদয় চমৎকার দেখা যায়;
![]() |
বন বাংলো, লেপচা জগৎ |
ফরেস্ট বাংলোটি বেশ সুন্দর জায়গায়, মেন্ রোড থেকে ৩০০ মিটার মতন পথ অরণ্যের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গেলেই পাওয়া যাবে দ্বিতল এবং সুসজ্জিত বনবাংলোটিকে। অনেকগুলি ঘরেই রয়েছে ফায়ার প্লেস, ঘর সংলগ্ন বাথরুমে রয়েছে গিজার। ভিড় এড়াতে অনেক আগেই বুকিং করে রাখা দরকার। বুকিং - ২৩৩৫০০৬৪, ব্লক কেবি ১৯, সেক্টর - ৩, সল্টলেক, কলকাতা - ১০৬. মোট ছয়টি ঘর রয়েছে এখানে। পাঁচটি দ্বিশয্যা বিশিষ্ট স্যুট রুম এবং একটি চার শয্যা বিশিষ্ট ফ্যামিলি রুম রয়েছে ।
![]() |
কাঞ্চনকন্যা হোম স্টে |
লেপচা জগতে বেশ কিছু হোম স্টে গড়ে উঠেছে, সেগুলিতে স্পটে গিয়ে বুকিং করতে হবে; অবশ্য কলকাতার বন ভয়েজার গ্রূপ অফ হোটেলসে এগুলির বুকিং করা যায় (98744 74989 / 98367 55550)
লেপচা জগতে এক বা দুই রাত্রি কাটিয়ে চলে যেতে পারেন কাছাকাছি থাকা এরকমই অন্যান্য গন্তব্যে, সেগুলি নিয়ে আলোচনা করব আগামী পর্বগুলোতে। (চলবে)
No comments:
Post a Comment