Ads Top

Vaizag - Araku trip at winter

শীতকালে ভাইজাগ - আরাকু ভ্ৰমণ 


অন্য রুট, ১৬/১১/২০১৯ :  শীতকালে ভাইজাগ আরাকু বেড়াতে গেলে ভাল লাগবে। কিন্তু ঠিক কিভাবে ভাইজাগ আরাকু ভ্রমণ সাজিয়ে তুলবেন, এই লেখায় সেটাই আলোচনা করব;
 প্রথমেই বলে রাখা ভাল, যে এই অঞ্চলটিতে বেড়াতে গেলে ভ্রমন তালিকায় রাখতে পারেন বিশাখাপত্তনম ( ভাইজাগ), আরাকু ভ্যালি, বোরা  কেভস, জগদলপুর ও ঋষিকোন্ডা জলপ্রপাত ও সিমাচলম। প্রধান প্রধান এই জায়গাগুলি ছাড়াও আশেপাশে আরো কিছু জায়গা রয়েছে দেখার মত, হাতে ছুটি কতটা রয়েছে তার ওপর নির্ভর করবে কিভাবে এই জায়গাগুলিতে আপনি আপনার সফরসূচি সাজাবেন। যেমন হাতে সময় থাকলে অনেকেই হায়দ্রাবাদ বেড়াতে চলে যান; এখানে মোটামুটি সবটাই আলোচনা করার চেষ্টা করছি।

বিশাখাপত্তনম এক নজরে - বিয়াশাখাপত্তনম জায়গাটির অবস্থান অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যে, বঙ্গোপসাগরের ধারে  এবং পূর্ব ঘাট পর্বতমালার কোল ঘেঁষে। বিশাখাপত্তনমের  আর দুই ডাক নাম হল ভাইজাগ ও ওয়াল্টেয়ার। ভাইজাগ শহরটি  হল অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যের বাণিজ্যিক রাজধানী (যেমন মুম্বাইকে  ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হয়) এবং দেশের মধ্যে তৃতীয় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শহর; শীতকালে মনোরম আবহাওয়া থাকায় পর্যটকের ভিড় বেশি হয়, যদিও সারা বছর ধরেই এখানে রয়েছে পর্যটকের আনাগোনা।
কি ভাবে যাবেন - কলকাতা থেকে ভাইজাগের দূরত্ব ৮৮৫ কিলোমিটার।

রেলপথ - ১) হাওড়া - মাইসোর এক্সপ্রেস - হাওড়া থেকে বিকেল ৪:১০এ ছেড়ে ভাইজাগে পৌঁছায় পরের  দিন ভোর ৫:৩৫ মিনিটে।
২) গৌহাটি সেকেন্দ্রাবাদ স্পেশ্যাল - হাওড়া থেকে মাঝ রাত্রি ২:০৫ এ ছেড়ে ভাইজাগ পৌঁছায় পরের দিন সকাল ৭:৪০ মিনিটে।
৩) হাওড়া মাদ্রাজ মেল্ হাওড়া ছাড়ে রাত্রি ১১:৪৫এ, ভাইজাগ পৌঁছায় দুপুর ১:৫০এ;
৪) করমণ্ডল  এক্সপ্রেস হাওড়া ছাড়ে দুপুর ২:৫০এ, ভাইজাগে পৌঁছায় পরদিন ভোর ৪:০০টের সময়;
৫) হামসফর এক্সপ্রেস হাওড়া ছাড়ে দুপুর ১২:৪০এ, ভাইজাগ পৌঁছায় মাঝ রাত্রি ২:১০এ;
৬) কন্যাকুমারী এক্সপ্রেস হাওড়া ছাড়ে বিকেল ৪:১০এ, ভাইজাগ পৌঁছায় পরদিন ভোর ৫:৩৫ মিনিটে।
৭) গৌহাটি সেকেন্দ্রাবাদ এক্সপ্রেস / তিনসুকিয়া ব্যাঙ্গালোর সিটি এক্সপ্রেস / গৌহাটি তিরুবনন্তপুরম সেন্ট্রাল এক্সপ্রেস / শিলচর - ত্রিবান্দম এক্সপ্রেস হাওড়া  ছাড়ে রাত্রি ১:০৫এ, ভাইজাগ পৌঁছায় পরদিন দুপুর ৩:২৫এ.
৮) ইস্ট কোস্ট এক্সপ্রেস হাওড়া ছাড়ে রাত্রি ১১:৪৫এ, ভাইজাগ পৌঁছায় দুপুর ৩:৪৫এ.
৯) অমরাবতী এক্সপ্রেস হাওড়া ছাড়ে রাত্রি ১১:৩০এ , ভাইজাগে পৌঁছায় পরদিন বেলা ১২: ৩৫এ;
১০) শালিমার সেকেন্দ্রাবাদ এসি এক্সপ্রেস শালিমার ছাড়ে বিকেল ৪:০৫এ, ভাইজাগে পৌঁছায় পরদিন ভোর ৫:৩৫এ.
১১) গুরুদেব এক্সপ্রেস শালিমার ছাড়ে রাত্রি ১১:০৫এ, ভাগ পৌঁছায় পরদিন দুপুর ২:০৫এ;
১২) অঙ্গ এক্সপ্রেস হাওড়া ছাড়ে রাত্রি ১১:৩০এ, ভাইজাগ পৌঁছায় পরদিন বেলা ১২:৩৫এ.;
১৩) যশোবন্তপুর এক্সপ্রেস হাওড়া ছাড়ে রাত্রি ৮:৩৫এ, ভাইজাগ পৌঁছায় পরদিন সকাল ১০:৩৫এ;
১৪) ফলকনামা এক্সপ্রেস হাওড়া ছাড়ে সকাল ৭:২৫এ, আর ভাইজাগ পৌঁছায় রাত্রি ৯:০৫এ.
১৫) শালিমার ত্রিবান্দম এক্সপ্রেস ভাইজাগ ছাড়ে রাত্রি ১:০৫এ, ভাইজাগে  পৌঁছায় পরদিন দুপুর ৩:৩০এ'


ভারতীয় রেলের টাইম টেবিল অনুসরণ করলে আরো কিছু বিকল্প ট্রেনের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে, তবে বিমানেও  যাওয়া যেতে পারে ভাইজাগে। কলকাতার দমদম  বিমান বন্দর থেকে সরাসরি বা ভায়া ভুবনেশ্বর অনেকগুলি বিমান পরিষেবা পাওয়া যেতে পারে। সময় লাগে দেড় ঘন্টা মতন; সড়কপথেও অনায়াসে  চলে  যাওয়া যায় ভাইজাগে।

কিভাবে ঘুরবেন - পুরো সফরে ভাইজাগের জন্যে ৩ দিন, আরাকুর জন্যে ১ বা ২ দিন, জাগদলপুরে ১ দিন থাকতে পারলে ভাল হয়;  ভাইজাগ রেল স্টেশন থেকে সমুদ্রের ধার একটু দূরে, রেল স্টেশন থেকে রিকশা বা অটো  রিকশা ধরে নিতে পারেন। শহরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় সৈকতটি হল রামকৃষ্ণ বীচ, এই সৈকতের ধারে  যে হোটেলগুলি আছে তার মধ্যে দু`একটি বাদ  দিলে সবগুলিই বেশ দামি, ডাবল বেড রুমের  ভাড়া নিয়ে নিতে পারে ৩৫০০ - ৪০০০ টাকা প্রতি রাত্রে বা তার চেয়েও কিছুটা বেশি। তাই উচিত হবে বীচ থেকে শহরের দিকে একটু ভিতরদিকে থাকা, সেখানে একটু কম দামি হোটেল পাওয়া যায়.;

ভাইজাগ শহরে রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় জায়গা যা পর্যটকদের মন কাড়ে , তার মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল রামকৃষ্ণ বীচ।  বোল্ডার বেশি থাকায় এই বীচে স্নান করার নিয়ম নেই. শুধু তাই নয় এই বীচে ধূমপান ও মদ্যপান কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, প্লাস্টিকও নিষিদ্ধ।  সমুদ্র সৈকত থেকেই দূরে দেখা যায় পূর্বঘাট পাহাড়ের একটি অংশ যাকে ডলফিন নোজ বলে; একটি গাড়ি ভাড়া করে বা অটোরিকশা ভাড়া করে ভাইজাগে এক এক করে সাইট সিয়িং করে নিলে ভাল হয়;

কি কি দেখবেন - ভাইজাগ শহরের মধ্যেই ১৭৩ মিটার  উঁচু জায়গায় ৩৮০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে কৈলাসগিরি। যেখানে হর-পার্বতীর  যুগল মূর্তি রয়েছে পাশাপাশি। ভাইজাগের দ্বিতীয় দ্রষ্টব্য  হল কুড়শুড়া সাবমেরিন। ভারতীয় নৌবাহিনীর পঞ্চম সাবমেরিন, ৩১ বছর কাজ করার পর এখন ভাইজাগের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। বহু যুদ্ধের সাক্ষী সে, ১৯৭১ সালের পাকিস্তান যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিল, এখন এটিকে একটি মিউজিয়াম হিসেবে ব্যবহার করা হয়.;  তৃতীয় দ্রষ্টব্যঃ অবশ্যই ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল পার্ক  বা চিড়িয়াখানা, অন্যান্য জন্তু জানোয়ারের সাথে এখানে প্যুমা  দেখতে পাওয়া যায়; ভাইজাগে বেশ কয়েকটি সুন্দর সমুদ্র সৈকত আছে, যার মধ্যে একটি হল রামকৃষ্ণ বীচ, অন্যগুলিও বেশ আকর্ষণীয়, যেমন ঋষিকোন্ডা বীচ (এখানে স্নান করা যায়),ইয়ারডা  বীচ ও ভিমিলি বীচ; এই  ভিমিলি বীচটি ভাইজাগ  শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে গোষ্ঠানি নাদির মোহনায় অবস্থিত।


ভাইজাগের আর এক মুখ্য আকর্ষণ হলো ডলফিন নোজ ,এখানে পাহাড় নেমে এসেছে সমুদ্রে। পাহাড়ের আকৃতি ঠিক যেন ডলফিনের নাক , তাই এমন নামকরণ।  জায়গাটি ইয়ারদা ও গঙ্গাভারাম বন্দরের মাঝখানে অবস্থিত।  একটা সময়ে  এখানে ছিল সেনা ছাউনি , ইংরেজদের সাথে ফরাসী উপনিবেশকারীদের যুদ্ধ হয়েছিল এখানে। এখানেও রয়েছে একটি নদীর মোহনা , যন্ত্রচালিত নৌকায় চেপে নদী পার করে ওপারে গিয়ে সমুদ্রে স্নান করা যেতে পারে , তবে সাবধান জায়গাটি একটি অতি নির্জন এলাকা , ভাইজাগ  ভ্রমণকালে ঘুরে নিতে পারেন এখানকার বরাহ লক্ষ্মী মন্দিরটি।


ভাইজাগের সবকটি জায়গা ভালভাবে ঘুরে দেখতে পুরো দুই দিন লেগে যেতে পারে। ভাইজাগ  ভ্রমন সাঙ্গ  করে পরের দিনটি রাখুন আরাকু ভ্যালি বেড়াতে যাওয়ার জন্যে। শুধু আরাকু ঘুরলে এক রাত্রি সেখানে কাটালেই চলবে, তবে ভালভাবে ঘুরতে চাইলে দুই রাত্রি থাকলে ভাল হয়; (চলবে) 

No comments:

Aaj Khabor. Powered by Blogger.