Ads Top

Darjeeling hills.

দার্জিলিং ছুঁয়ে আশেপাশে 


অন্য রুট, ১৬/১১/২০১৯ :  শীতকাল প্রায় এসেই পড়েছে, আলমারি থেকে গরম জামাকাপড় উঁকি দিচ্ছে, এবার তাদের বেরিয়ে পড়ার পালা। আর শীতকাল আসছে, তাই আপনার এইবার বেরিয়ে পড়ার পালা। তাই আজকের আলোচনা শীতকালে কোন কোন জায়গাকে ভ্রমণের গন্তব্য হিসেবে বেছে নিলে ভাল হয়  সেই বিষয়ে।
পাহাড় : দার্জিলিং পাহাড় - দার্জিলিং পাহাড়ে রয়েছে অনেক গন্তব্য, দার্জিলিং শহরটিকে দুদিনের জন্যে ছুঁয়ে আশেপাশের জায়গাগুলি বেরিয়ে নিতে পারলে ভাল হয়; ১) দার্জিলিং - কার্শিয়াং - সিটং : শিলিগুড়ি থেকে অনেকেই দার্জিলিং বেড়াতে চলে যান কার্শিয়াং শহরের ওপর দিয়েই, কিন্তু অনেকেই খেয়াল করেন না, কার্শিয়াং শহর ও তাকে কেন্দ্র করেও রয়েছে বেশ কিছু ভ্রমন গন্তব্য। কার্শিয়াঙের উচ্চতা ৪৭৮৩ ফুট; শীতকালে কিন্তু খুব ঠান্ডা এই কার্শিয়াং।

এখানে যে যে জায়গাগুলি রয়েছে দেখার জন্যে সেগুলি হল ডাউহিল, ঈগলস ক্র্যাগ, ডাউহিল ডিয়ার পার্ক ও ইকো পার্ক , ডাউহিল স্কুল, সেন্ট মেরিজ চার্চ, গিদ্দা পাহাড়ে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বাড়ি ও তাঁর ব্যবহৃত সামগ্রীর সংগ্রহ, পাগলাঝোরা জলপ্রপাত ইত্যাদি। পাইন  বনে ছাওয়া কার্শিয়াঙের সৌন্দর্য্য অসামান্য, সময় থাকলে  যাওয়া যেতে পারে বিখ্যাত মকাইবাড়ি চা বাগানটি। একটা রাত্রি কার্শিয়াঙে কাটিয়ে বেরিয়ে পড়ুন সিটংএর উদ্দেশ্যে;

সিটং  জায়গাটি অল্পচেনা ঘন অরণ্যাবৃত একটি ছোট এলাকা যা কিনা এতদিন পাহাড়ের  ঘেরাটোপে আড়ালে  লুকিয়ে ছিল, অচেনা থেকে গিয়েছিল  পর্যটকদের চোখ থেকে। ৪০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত লেপ্চা জনগোষ্ঠীর বাস এই সিটংএ , জায়গাটিকে কমলালেবুর অঞ্চল বলা উচিত, কেননা চারদিকেই কমলালেবুর অরণ্য।  সিটং গ্রামে একরাত্রি থাকার অভিজ্ঞতা অত্যন্ত মধুর, সেখানে কোনো ভাল হোটেল নেই, আছে বেশ কিছু হোম স্টে, তাদের আতিথেয়তা এত সুন্দর যে অভিভূত হয়ে যাবেন। 

সিটংকে কেন্দ্র করে ২০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যেই রয়েছে অনেকগুলি দর্শনীয় স্থান। যেমন লাটপাঞ্চার, মংপু, তাকদা, দিলারাম, মহানন্দা স্যাংচুয়ারি ইত্যাদি। যাঁরা পাখি দেখতে ভ্যালোবাসেন তাঁদের খুব ভাল লাগবে এই সিটং অঞ্চল। 
লাটপাঞ্চার জায়গাটি হল হিমালয়ের গোপন এক অসামান্য সৌন্দর্যের খনি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মুগধ করে পর্যটকদের। এখানে প্রকৃতির মাঝেই রয়েছে সুন্দর একটি লেক, নাম নামথিং  লেক; উচ্চতা ৪২৫০ ফুট. এই লেকেই দেখতে পাওয়া যাবে প্রাগইতিহাসিক যুগের প্রাণী হিমালয়ান সালামান্ডারকে। এই অঞ্চলে রয়েছে নানান প্রজাতির পাখি। লাটপাঞ্চার গ্রাম থেকে কিলোমিটার চার বা পাঁচেক এগোলেই অহল দাঁড়া নামের সুন্দর একটি ভিউ পয়েন্ট রয়েছে, যেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য নীরবে উপভোগ করা যাবে, জায়গাটি অত্যন্ত নিরিবিলি। এখানে লেপচাদের একটি মনাস্ট্রি রয়েছে, চারদিকে সিঙ্কোনা চাষ হলেও কমলালেবুর ফলন সবচেয়ে বেশি।

মংপু জায়গাটির সাথে জুড়ে আছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম. এখানেই বেশ কিছুদিন কাটিয়ে গেছেন কবিগুরু, রয়েছে তাঁর স্মৃতি ঘেরা বাস ভবনটি, সাথে রয়েছে তাঁর ব্যবহৃত সামগ্রীর সংগ্রহ শালা। মংপুতেও ব্যাপকহারে সিঙ্কোনা চাষ হয়, আর এই এলাকায় মেডিসিনাল প্ল্যান্টসের চাষ দেখা যায়; মংপু থেকে ফেরার পথে দেখে নিন ডানকানের   বিখ্যাত  রংলি রংলিয়াট  চা বাগানটি। রংলি রংলিয়ট কথাটির মানে হল যতদূর চোখ যায় ততদূর বিস্তৃত সবুজ ঢেউ খেলানো গালিচা, সার্থক নাম, সেটা দেখলেই বুঝতে পারা যায়; মংপু থেকে একটু নিচে নামলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে তিস্তাবাজারে, যেখান দিয়ে তিস্তা নদী পার করে চলে যাওয়া যায় কালিম্পঙ বা সিকিমের পথে; তিস্তা বাজারের ঐ সেতুর নিচ দিয়ে পথ গিয়েছে পেশকে; চারদিকে সবুজ চা বাগানের মধ্যে এক টুকরো জনপদ পেশক, এখানে একটি লাভার্স পয়েন্ট রয়েছে, ছোট্ট একটি পার্ক যেখান থেকে নিচের দিকে তাকালে রঙ্গীত  ও তিস্তা নদীর  মিলন দৃশ্য দেখতে পাওয়া যাবে। পেশক থেকেই এবার ওপরের দিকে এগিয়ে চলা; পথে পারবে তিনচুলে গুম্বাদারা ভিউ পয়েন্ট। মেঘেদের রাজ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলার দেশ; চারদিকের নৈসর্গিক দৃশ্য মন ভুলিয়ে দেবে। আরও এগোলে পাওয়া যাবে থেকেচিন ছলিং মনাস্ট্রি, এরপরেই পৌঁছে যাওয়া যাবে লামাহাট্টা ।

 হিমালয়ের আর  এক অলিন্দে থাকা লামাহাট্টার প্রধান আকর্ষণ হল এখানকার ৫০০ বছরের পূরণ ডুকপা বৌদ্ধদের একটি মনাস্ট্রি, চারদিকে পতপত করে উড়ছে বৌদ্ধদের প্রার্থনা পতাকা। লামাহাট্টা থেকে সিঞ্চল অরণ্যের গা ঘেঁষে পথ চলে যাচ্ছে জোর বাংলো, কাঁটা পাহাড় হয়ে ঘুমে। এখন থেকেই ডানদিকে ঘুরে মাত্র আট কিলোমিটার দূরেই রয়েছে দার্জিলিং। এই ট্রিপে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু (কার্শিয়াং), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (মংপু) ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের (দার্জিলিং) বাস ভবন থেকে ঘুরে নেওয়া যাবে। মংপু বা লাটপাঞ্চার ভ্রমনকালে ইচ্ছে হলে তাকদা  জায়গাটি থেকেও ঘুরে নিতে পারেন, ভাল লাগবে রামধুরাও। 

এখানে আলোচনা করছি শুধুমাত্র দার্জিলিং শহরটিকেই ভ্ৰমণ গন্তব্য হিসেবে বেছে না নিয়ে দার্জিলিংকে ছুঁয়ে এই এলাকার  অন্যান্য জায়গাগুলি থেকে ঘুরে নেওয়ার বিষয়ে, যাতে দার্জিলিং সফর আরও আকর্ষক হয়ে ওঠে. দার্জিলিং সহ অন্যান্য জায়গাগুলির বিবরণ দেব পরবর্তী অধ্যাগুলিতেও। এই এলাকা গুলিতে গিয়ে কোথায় কোথায় থাকবেন, খোঁজ দিয়ে দেব তারও। মেজর রাখুন পরবর্তী অধ্যায়ে।(চলবে)

No comments:

Aaj Khabor. Powered by Blogger.