Ads Top

দেশের ভ্রমন : আন্দামান - পর্ব ১

 দেশ
স্বাগত সবুজ দ্বীপে 

অন্য্ রুট, ২৪/১১/২০১৯ : শীতকালে সমুদ্র শান্ত থাকার জন্যে আন্দামানে বেড়াতে যান বহু মানুষ, শীতকালের এই সময়টায় গরম কম থাকায় আবহাওয়াও মনোরম থাকে, তাই বেশির ভাগ মানুষ চান এই শীতকালেই আন্দামান বেড়াতে যেতে। বঙ্গোপসাগরের ওপর আন্দামান বেশ জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, কেননা এখানে আছে অনেক সমুদ্র সৈকত, অজস্র দ্বীপ, পাহাড়, অরণ্য, স্বচ্ছ নীল সমুদ্র, ইতিহাস, জাহাজে চড়ে ঘুরে বেড়ানো  আর ছুটির আনন্দ। সব মিলিয়ে আন্দামান মানেই জমজমাট ছুটির আনন্দ। পরিবারের সাথে কিংবা হানিমুন দুটিতেই অনবদ্য এই ছুটির ঠিকানা।

আন্দামানের রাজধানী শহর হল পোর্ট ব্লেয়ার। একসময় স্বাধীনতা সংগ্রামী বন্দিদের দ্বীপান্তরের শাস্তি হিসেবে আন্দামানে রাখা হাত, যাকে ভারতীয়রা কালাপানি নামে চেনে। পোর্ট ব্লেয়ারেই আছে বিশাল সেলুলার জেল, কিন্তু ঐ সেলুলার জেল ছাড়াও আরো কিছু দ্বীপ আছে যেখানে রাখা হত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের। বাগপসাগরের ওপর এখানে রয়েছে দ্বীপমালা, অর্থাৎ বহু দ্বীপের সমষ্টি। এই দ্বীপ সমষ্টির উত্তরদিকটা হল আন্দামান আর দক্ষিণ দিকটা হল নিকোবর, সব মিলিয়ে দ্বীপ সমষ্টির নাম হল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। আন্দামান - নিকোবরে দুটি জেলা রয়েছে, একটি আন্দামান, অপরটি নিকোবর (নতুন জেলা হয়েছে ১৯৭৪ সালে); গোটা দ্বীপপুঞ্জের প্রশাসনিক কাজকর্ম হয় পোর্ট ব্লেয়ার থেকেই। আন্দামান নিকোবরের সবটাই ভারতের অংশ, শুধু এই দ্বীপ সমষ্টির ৫টি দ্বীপ রয়েছে উত্তর পূর্বে থাকা মায়ানমারে, যাকে  কোকো দ্বীপ বলে; 
এক টুকরো পর্যটন 

মনে রাখতে হবে আন্দামানে পর্যটকেরা বেড়াতে গেলেও নিকোবর দ্বীপ কিন্তু পর্যটকদের জন্যে এখনো উন্মুক্ত হয়নি। নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর। আন্দামানের প্রকৃত বাসিন্দাদের যেমন গ্রেট আন্দামানিজ বলা হয়, তেমন নিকোবরের আদি বাসিন্দাদের গ্রেট নিকোবরীজ বলা হয়; নিকোবরের মানুষ সাধারণ ভারতীয়দের মতই জীবন যাপন করেন। তাঁরা শিক্ষিত, সরকারি চাকরি করেন এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করেন, কিন্তু তাঁরা চান না বাইরের জগতের লোকেরা এসে তাঁদের জীবন যাপন, সমাজ ও সংস্কৃতির ওপর প্রভাব ফেলুক, তাঁদের প্রকৃতি ও পরিবেশ বদলে যাক, আর এই কারণেই  নিকোবরে সাধারণ মানুষ এবং পর্যটকদের যেতে দেওয়া হয় না; শুধু তাই নয় নিকোবর দুটি আদিবাসী গোষ্ঠীর মাতৃভূমি, যাদের একটি হল নিকোবরীজ ও অপরটি হল শ্যম্পন। 
মাছ ধরতে ব্যস্ত নিকোবরীজরা 

এদের বাস, গ্রেট নিকোবর বায়োস্ফিয়ার রিসার্ভ, গভীর অরণ্যে। যারা বাইরের জগতের মানুষ দেখলে এখনো বিষাক্ত তীরের ব্যবহার করে; নিকোবরের দূরত্ব ভারতের মূল ভূখন্ড থেকে প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার দূরে, দ্বীপমালার অবস্থান এমন এক জায়গায় যেখানে যে কোনো দেশের আক্রমন হওয়া অনেক সহজ, তাই পুরো এলাকায় মোতায়েন রয়েছে ভারতীয় ফৌজ, পুলিশ ও ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো। নিকোবরের একেবারে দক্ষিণতম জায়গাটির নাম ইন্দিরা পয়েন্ট, আর এটিই ভারতের দক্ষিণতম প্রান্ত। 
মুরুগান মন্দির, কার নিকোবর 

এখানে একটি টাওয়ার ছিল, যা সুনামির সময় বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ভারত সরকার নিকোবরকে সুরক্ষিত রেখেছে, এখানে উন্নয়নের জন্যে কাজ করে চলেছে, নিকোবর থেকে প্রচুর পরিমানে নারকেল রপ্তানি করা হয়; এখানে সাধারণ মানুষের যাওয়া নিষিদ্ধ, তবে একমাত্র যদি আপনি আন্দামানের ডিসি অফিস থেকে ট্রাইবাল পাস্ পান, যদি আপনাকে কোনো নিকোবরীজ আমন্ত্রণ জানায় অথবা সরকারি চাকরি সূত্রে যদি আপনাকে ঐ দ্বীপগুলিতে যেতে হয়, তবেই আপনি প্রবেশাধিকার পাবেন নিকোবরে যাওয়ার। তবে সর্বত্র নয়, আপনি যেতে পারবেন কার নিকোবর, লিটল নিকোবর, গ্রেট নিকোবর ও নানকৌড়ি দ্বীপে। 
নানকৌড়ি 

যেহেতু নিকোবর দ্বীপে পর্যটন নেই তাই আর নিকোবর নিয়ে আলোচনায় যাচ্ছি না, এবার সব আলোচনা আন্দামান নিয়েই শুরু করছি। (চলবে)
অনিরুৎ দেখতে লগ যান করুন - www.anyoroute.blogspot.com

No comments:

Aaj Khabor. Powered by Blogger.