Ads Top

ভাইজাগ - আরাকু পর্ব - ৫ (শেষ পর্ব)

দেশ
সিমাচলম 

অন্য রুট, পর্ব - ৫ - ভাইজাগ - আরাকু  ২৪/১১/২০১৯ :  ভাইজাগ বেড়াতে গিয়ে একফাঁকে উচিত হবে সিমাচলম ঘুরে নেওয়া। ভাইজাগ থেকে সিমাচলমের  দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটারের মত, গাড়িতে যেতে সময় লাগবে ৪০ মিনিট আর বাসে  যেতে সময় লাগবে এক ঘণ্টা। সকাল বেলায় বেরিয়ে দুপুর নাগাদ ফিরে আসা যাবে। 
সিমাচলম জায়গাটির উচ্চতা প্রায় ১০০০ ফুট; এখানে রয়েছে লক্ষী নারায়ণ নরসিংহ মন্দির। এই মন্দিরটি অতি প্রাচীন, তৈরি করেছিল চালুক্য রাজবংশ। কিন্তু মাঝে (১৫৬৪ - ১৬০৪ সাল) বহু বছর এই বৈষ্ণব তীর্থক্ষেত্র পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল, ১৯৪৯ সালে মন্দিরটির পূর্ণ সংস্কার করেছিল অন্ধ্র প্রদেশ সরকার। প্রাচীনকালে পুরীতে বিতর্কসভায় জয়লাভ করার পর সাধু রামানুজম এই মন্দিরে এসেছিলেন, এই মন্দিরে রামানুজমের একটি মূর্তিও আছে; এখানে নরসিংহ রূপে পূজিত হন শ্রীবিষ্ণু।   
আনাকাপালে 

ভাইজাগ, আরাকু বা জাগদলপুর বেড়াতে যান অনেকেই, এবার অন্য্ রুট আপনাকে ভাইজাগ থেকে কয়েকটি অন্যরুটের খবর দেবে। ভাইজাগ থেকে মাত্র ১০১ কিলোমিটার  রয়েছে লাম্বাসিঙ্গি, পাহাড়ের মাথায় ছোট্ট শৈল কেন্দ্র। ভাইজাগ থেকে গাড়িতে যেতে সময় লাগবে আড়াই ঘণ্টা। প্রথমে ভাইজাগ থেকে বেরিয়ে ২৫ কিলোমিটার দূরে আনাকাপালে চলুন। এখানে রয়েছে সারদা নদী, তার পার্শবর্তী জায়গাগুলি বেশ ভালো লাগবে। এখানে সাঁকরাম গ্রামের কাছে রয়েছে বজ্জানাকোন্ডা, এখানে পাহাড় কুঁদে তৈরি হয়েছে দুটি প্রাচীন বৌদ্ধ স্তুপ।রয়েছে নুকঅম্বিকা মন্দির, কোনডাকারলা বার্ড স্যাংচুয়ারি এবং সূর্য নারায়ন মন্দির। 
কুয়াশা ঘেরা লাম্বাসিঙ্গি 

আনাকাপালে থেকে মোটামুটি ৫০ কিলোমিটার দূরত্বে পাহাড়ের মাথায় অবস্থান লাম্বাসিঙ্গির, এই জায়গাটি গোটা দক্ষিণ ভারতের মধ্যে সবচেয়ে ঠান্ডা জায়গা।এই জায়গাটিকে অন্ধ্র প্রদেশের কাশ্মীর বলা হয়; চারদিকে পাহাড় আর ঘন  সবুজ অরণ্যাবৃত উপত্যকা শহুরে মনের ইঞ্জিনে অপার উদ্দীপনা এনে দেয়; মনে হয় ছুটি যেন সার্থক হল; এখানে আরণ্যক পরিবেশের মধ্যে ইযারাভরম  জলপ্রপাতটি দেখবার মতন; লাম্বাসিঙ্গির উচ্চতা প্রায় ১০০০ মিটার বা ৩২৮০ ফুট ।
লাম্বাসিঙ্গিতে তুষারপাত 

শোনা যায়, দক্ষিণ ভারতের এখানেই নাকি শীতকালে হালকা তুষারপাতের রেকর্ড আছে, আবার কেউ কেউ বলেন ওগুলো তুষার নয়, খুব ঠান্ডা শিশির বিন্দু। তবে এটা ঠিক যে, শীতকালে এখানে বেশ বরফ পড়ে। জায়গাটি বনাঞ্চল হওয়ায় বেশ নিস্তব্ধ, এক সময় এখানে বাঘ দেখা গেলেও এখন আর দেখা যায় না, তবে গৌড় দেখা যায়, আর প্রচুর সংখ্যক পাখি আছে; ভাইজাগ থেকে এরকম একটা পাহাড়ি জায়গায় ঘুরে আস্তে মন্দ লাগবে না; 
শ্রীকাকুলাম 

ভাইজাগ থেকে ১১৬ কিলোমিটার দূরে রয়েছে শ্রীকাকুলাম শহরটি। এটি হল অন্ধ্র প্রদেশ ও ওড়িশা রাজ্যের সীমানা। এখানে ৮০০ বছরের পুরোন  গঙ্গা রাজাদের তৈরী কিছু মন্দির ও স্থাপত্য দেখতে পাওয়া যায়, রয়েছে বৌদ্ধ, জৈন ও হিন্দুদের বেশ কিছু মন্দির ও মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। নাগভেলি নদীর ধারের এই শ্রীকাকুলাম শহরের সাথে  ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে, তেমন পর্যটক আকর্ষণের জন্যে রয়েছে সমুদ্র সৈকত। তবে এখানে জেলেদের ভিড় খুব বেশি। 
ইয়ানাম 

ইয়ানাম জায়গাটি ভাইজাগ থেকে ১৮১ কিলোমিটার দূরে গৌতমী - গোদাবরী নদীর ধারে অবস্থিত ছোট একটি শহর, যদিও এই জায়গাটি পুদুচেরির অংশ বলা যায়, এখানে ছিল ফরাসি উপনিবেশ। ফরাসিদের সংস্কৃতি ও ঔপনিবেশিক ইতিহাস জানতে পারা  যাবে এখানে এলে; গোটা শহর ছেয়ে  রেখেছে  নারকেল গাছের সারি । অন্ধ্র প্রদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হল রাজামুন্দ্রে, অবস্থান গোদাবরী নদীর পূর্ব পারে, এখানকার মুখ্য আকর্ষণ হল বিশাল ইসকনের মন্দির। 
পাপিকোন্দালু 

ভাইজাগ থেকে ১৯০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে পাপিকোন্দালু। তিনটি উঁচু পাহাড়ের মিশ্রণ এই জায়গাটি। তার মধ্যে একটি হল পাপী হিল, পাহাড়গুলির একটা দিক খাড়াই ভাবে নেমে গেছে গোদাবরী নদীতে, আর গোদাবরী নদী যেন ঘেরাও করে রেখেছে এই জায়গাটিকে। প্রাকৃতিক দৃশ্য অতি মনোরম। 
কোরিঙ্গা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি 

ভাইজাগ থেকে ১৯৮ কিলোমিটার দূরে পূর্ব গোদাবরী জেলায় রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম (সুন্দরবনের পর) ম্যানগ্রোভ অরণ্য কোরিনগা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি। জায়গাটি কাকিনাড়া বন্দর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে রয়েছে, এখানে নানারকম প্রজাতির পাখি দেখতে পাওয়া যায়, যার মধ্যে কয়েকটি বিরল প্রজাতির, তবে এখানে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার নেই;
মারেডুমিল্লি 

পূর্ব গোদাবরী জেলায় আর এক দ্রষ্টব্যঃ হল মারেডুমিল্লি। পাহাড়, অরণ্য, জঙ্গল রিসর্ট, ট্রাইবাল লাইফ স্টাইল, জলপ্রপাত এবং অসামান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, সবকিছু মিলিয়ে মারেডুমিল্লি জায়গাটি হল আমাদের দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ইকো ট্যুরিজম পয়েন্ট, জায়গাটি ভাইজাগ থেকে ২২৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
হাতে সময় থাকলে ভাইজাগ বেড়ানোর সময়কাল একটু বাড়িয়ে নিন আর ভাইজাগের কাছাকাছি থাকা সুন্দর সুন্দর জায়গাগুলিও অবশ্যই ঘুরে নিন, ভাল লাগবে। ছুটির দিনগুলো হয়ে উঠবে আরও রঙ্গিন।

অন্ধ্র প্রদেশ ট্যুরিজম সেন্টার - কুরমাননাপালেম - ভাইজাগ -  92474 61082
ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার - কাকানি নগর লেন  - 92474 61082

গাড়ি ভাড়ার জন্যে যোগাযোগ করতে পারেন - নিত্য কার - 93949 59595, ড্রিম কার - 89196 17664, 
ব্লু ড্রাইভ ইন্ডিয়া - 1800 3000 5254 (টোল ফ্রি), শিব শক্তি ট্র্যাভেলস - 98482 56004, রিনু ট্র্যাভেলস - 96425 09307;
পাপিকোন্দালুতে  নৌবিহার 

ভাইজাগে গিয়ে অনেকেই দক্ষিণ ভারতীয় খাবার খেতে পারেন না, বাঙালি খাবার খোঁজেন, তাই তাঁদের সুবিধার্থে ভাইজাগের কিছু বাঙালি হোটেলের খোঁজ দিয়ে রাখলাম - হোটেল নিমন্ত্রণ, আলিপুরমের কাছে ধাবা গার্ডেন্সের কাছে রাঙা রোডে ; রসই কলকাতা, সেক্টর ৮; রাজুস ডেলিক্যাসি, এইচ বি কলোনি; এছাড়াও রয়েছে আরো কিছু বাঙালি রেস্টুরেন্ট। 

উৎসব - ইয়ুথ ফেস্ট - ২৪/১১, পিন্নাকেল কালচারাল ফাস্ট - ৭/১২, ফ্রেসার থটস - ২২/১২, ভাইজাগ স্টুডেন্টস ফাস্ট - ২৬/১২, বিশাখা উৎসব - ১/১; (সমাপ্ত)

No comments:

Aaj Khabor. Powered by Blogger.