Ads Top

ভাইজাগ - আরাকু - ৩য় পর্ব

অন্য রুট, ১৯/১১/২০১৯ : ভাইজাগ - আরাকু - ৩য় পর্ব 

আরাকু ভ্যালির অনন্তগিরি পাহাড়ে রয়েছে বোরা কেভস। আরাকু অঞ্চলের অন্যতম প্রধান দ্রষ্টব্য।জায়গাটির উচ্চতা ২৬০০ ফুট থেকে ৪৩০০ ফুটের মধ্যে, এই গুহা হল দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুহাগুলির অন্যতম। গুহার ভিতরে ৮০ মিটার অবধি নামতে হয়; সিঁড়ি আছে, পর্যাপ্ত লাইট আছে; প্রথম দর্শনে বয়স্করা ভাবতে পারেন এতটা নিচ পর্যন্ত পৌঁছানো যাবে কিনা ! কিন্তু সকলের সাথেই শুরু করুন, কিছুটা থেমে  থেমে  হলেও পেরে যাবেন। তবে শারীরিক অসুবিধা বা ডাক্তারের বারণ থাকলে সাবধান !

গুহার অভ্যন্তরে আসমান আকৃতির স্ট্যালাকটাইটস ও স্ট্যালাগমাইটস পাথর গুহার সৌন্দর্য্য শতগুনে বৃদ্ধি করেছে। আসলে এগুলি কারস্টিক লাইমস্টোন। ১৮০৭ সালে ইংরেজ আমলে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার উইলিয়াম কিং জর্জ ভারতের সবচেয়ে গভীরতম এই গুহাটি আবিস্কার করেছিলেন বলে জানা যায়।  বোরা একটি ওড়িয়া শব্দ, যার মানে হল গর্ত, আর গুহালু হল তেলেগু শব্দ, যার মানে হল গুহা। দুই মিলে  জায়গাটির নাম হয়েছে বোরাগুহালু।

অনন্তগিরি  পাহাড়ের এই অঞ্চলে রয়েছে বেশ কিছু আদবাসী মানুষের বাস;  এখানে রয়েছে জাটাপু, পোরজা, কোন্দাদরা, নুকাডোরা ও বাল্মীকি সম্প্রদায়ের বাস;  বোরা গুহাকে নিয়ে স্থানীয় আদিবাসীদের মধ্যে একটি সুন্দর গল্প আছে, সেই গল্প এখনো এখানকার আদিবাসী মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ওঁরা বলেন, এক সময়, এই বোরা গুহার মুখের কাছে বিচরণ করতে থাকা একটি গরু পাহাড়ের গর্ত দিয়ে নিচে পরে যায়; সেই গরুকে খুঁজে বের করতে গিয়ে গরুর মালিক গর্তের মুখ দিয়ে নিচে নামে আর তারপর দেখে গুহার একেবারে নিচের অংশে রয়েছে একটি স্বয়ম্ভু শিব লিঙ্গ, যা দেখতে অনেকটা গরুর মত, গরুটিকেও অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়, গরুর মালিক বুঝতে পারে যে তার গরুকে শিবই  রক্ষা করেছেন।এরপর গরুটির মালিক গ্রামে ফিরে এসে গোটা ঘটনার কথা গ্রামবাসীদের জানালে সবাই মিলে  গুহার মুখে একটি ছোট শিব মন্দির গড়ে তোলে। স্থানীয় মানুষের ধারণা গরু সদৃশ শিব লিঙ্গের নিচেই  রয়েছে গোষ্ঠানি নদীর উৎস্য। গোষ্ঠানি একটি সংস্কৃত শব্দ, যার মানে হল গরুর নিচে। গরুরুপী শিৱলিংগটিকে স্থানীয় মানুষ কামধেনু হিসেবে মানে। তারা বলে গোষ্ঠানি নদী এখান  থেকেই উৎপন্ন হয়ে ভিজিয়ানাগ্রাম ও বিশাখাপত্তনমের ওপর  দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভিমুনিপততনম-এর  কাছে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। (ভিমুনিপততনম দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীমের নামে  একটি জায়গা, সেখানেও রয়েছে দর্শনীয় কিছু জায়গা। পরে আসছি এই গল্পে);


বোরা  গুহার ভিতরে সূর্যের আলোর প্রবেশাধিকার নেই, তবে পর্যটকদের সেই অধিকার আছে; গুহার ভিতরে আলোর ব্যবস্থা আছে, অন্ধ্র সরকার গুহার মধ্যে লাগিয়ে দিয়েছে মার্কারি, সোডিয়াম ভেপার ও হ্যালোজেন আলো । গুহার ভিতরে তাপমাত্রা থাকে ১৬ ডিগ্রির কাছে, গুহার ভিতরে দেওয়ালের গা বেয়ে গড়িয়ে  পরে গন্ধক মিশ্রিত জল; ভিতরের  পাথরের  নানান রং,  গুহার মধ্যেই স্পেলিওথেম কার্বনেট পাওয়া যায়; গুহার অধিবাসীরা হল বেশ কয়েক প্রজাতির ছত্রাক ও এক ধরনের বাদুড়।  আরাকু শৈল  শহর থেকে বোরা গুহার দূরত্ব ২৯ কিলোমিটার। গুহার কাছাকাছি জায়গাটিও বেশ মনোরম, আকাশের গায়ে পাহাড়ের সারি দল বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে, চারপাশে সবুজ বনানী। কাছাকাছি তাইদা রেল সুরঙ্গ, দামুকু ভিউ পয়েন্ট এই জায়গাগুলি যেন বোরা  গুহা দেখতে যাওয়ার উপরি পাওনা।বোরা কেভস দেখে ফেরার পথে ইচ্ছে করলে ট্রেন ধরেও ফিরে যেতে পারেন,এই  রেলপথে রয়েছে  ৩০-৩৫টির মত টানেল। এখানে রেল স্টেশনের নামও বোরা কেভস রেল স্টেশন। বোরা গুহায় প্রবেশ করতে হলে টিকিট কাটতে হয়, গুহার কাছেই রয়েছে টিকিট ঘর, জনপ্রতি ৭০ টাকা, সাধারণ ডিজিটাল  ক্যামেরার টিকিট ১০০ টাকা, প্রফেশনাল ক্যামেরার চার্জ ২০০ টাকা, মোবাইল ফোনের জন্যে দিতে হয় ২৫ টাকা।  ভাইজাগ থেকে শুধু বোরা কেভস  যাওয়ার ট্যাক্সিও পাওয়া যায়, তবে ট্রেন সফর নিঃসন্দেহে অন্য এক মাত্রা যোগ করে; বোরা কেভ প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। মনে রাখবেন, বোরা  কেভসের কাছে সঙ্গের মালপত্র রাখার ব্যবস্থা আছে, ওখানকার অফিসে বা টিকিট ঘরে গিয়ে কথা বলতে পারেন। গুহার মধ্যে কতক্ষণ কাটাবেন তার কোনো সীমিত সময় বেঁধে দেওয়া নেই; তবে বিকেল পাঁচটায় বন্ধ  করে দেওয়া হয় এই গুহা। বর্ষাকাল খুব একটা নিরাপদ নয় এই গুহা, পাথর ও সিঁড়িগুলি বেশ পিচ্ছিল থাকে। টিকিট ঘর খোলে সকাল ১০যায় কিন্তু তার বেশ কিছু আগে থেকেই লম্বা লাইন পরে যায়, সেই লাইনে প্রায় এক ঘন্টা দাঁড়ানোর মানসিকতা রাখতে হবে, আবার অগ্রিম টিকিটের ব্যবস্থাও নেই; গুহার প্রবেশপথের কাছেই একটি বোর্ডে বোরা গুহা সম্বন্ধে নানান তথ্যাবলী দেওয়া আছে;


বোরা কেভস থেকে  ফিরে আসুন ভাইজাগেই। অনন্তগিরি পাহাড়ে সারাদিন আনন্দ করে সন্ধ্যের গোড়ায় এসে পৌঁছে যাবেন ভাইজাগে, তাই এই রাত্রিতা কাটিয়ে দিতে হবে ভাইজাগ শহরেই। ইচ্ছে হলে শপিং করুন অথবা সন্ধ্যেবেলায় গিয়ে বসুন রামকৃষ্ণ বীচে।পরের দিন যাব জগদলপুর বেড়াতে। সেখানেও এক রাত্রি কাটাতে হবে কোনো এক হোটেলে।


আরাকুর হোটেল -

  • মাইথ্রি ইন একজিকিউটিভ গেস্ট হাউস - 73820 72733 (১২০০/-)
  • উসোদয়া রিসর্টস  - 94414 67156 (১৩০০/-)
  • ড্রিম রয়্যাল গেস্ট হাউস - 063013 02499 (১২০০/-)
  • সান্তোস গেস্ট হাউস - 94923 82746 (১৭০০/-)
  • শ্রী সাই সুবর্ণ ইন - 89198 18755 (১৯০০/-)
  • মাউন্টেন ভিউ রিসর্ট - 98485 85006 (২৩০০/-)
  • এস এস এন প্রকৃতি রিসর্ট - 94419 75333 (২৬০০/-)
  • গোল্ডেন স্যান্ড ওজন ভ্যালি 88015 99988 (২৭০০/-)
  • রাজস্ হলিডে ইন - 99494 95958 (৩৪০০/-)
  • ধিমসা রিসার্টস - 89362 49786 (৩৫০০/-)
  • গ্রিন ভ্যালি ইন - 94400 82245 (৫৩০০/-)
  • কৃষ্ণ তারা কমফোর্টস - 80080 00855 (৭৮০০/-)

এছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু হোটেল। এখানে যে সমস্ত হোটেলগুলির রুম রেট দেওয়া হয়েছে, বুক করার আগে সেগুলির রেট আবার যাচাই করে নেবেন। ইমেল মারফত কনফার্মেশন নিয়ে নেবেন এবং ব্যাংক মারফত টাকা পাঠাবেন। (চলবে) 







No comments:

Aaj Khabor. Powered by Blogger.